ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

‘তিনদিন চুলা জ্বলে না, ছবি তুইল্যা কি লাভ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৬
‘তিনদিন চুলা জ্বলে না, ছবি তুইল্যা কি লাভ’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা থেকে: ‘ঘরে পানি উঠছে, আমরা নদীর পানিতে ভাসি, আমনেরা ছবি তুইল্যা সরকারের কাছে দিবেন, সরকার আমাগো লাইগ্যা চাল দিবো, কিন্তু ওই চাল তো আর আমরা পামু না, মেম্বার-চেয়ারম্যানরা সেই চাল দিবো তাদের পছন্দের মানুষকে। আমরা তো বঞ্চিত থাকুম, তাই ছবি তুইল্যা কি লাভ।

’ 

ক্ষোভের সঙ্গে এ কথাগুলো বলছিলেন মেঘনার জোয়ারে পানিবন্দি মোতাহার হোসেনের স্ত্রী আনোয়ারা (৪৫)। তিনি বলেন, একদিকে নদী ভাঙন অন্যদিকে পানিতে ভাসতাছি, আমরা কোথায় আশ্রয় নিমু।   

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত গৃহবধূ নুর নাহার বলেন, পানিতে ঘরের চুলা ডুবে আছে, তিনদিন ধরে ঘরে রান্না চুলা জ্বলে না’ পোলাপানরা (সন্তান) খাওয়ার লইগ্যা চিৎকার চেচামেচি করতাছে। কিছু কিনে খায়ামু সেই টাকাও নেই। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না।  

তিনি বলেন, ভাঙ্গা বাঁধ দিয়া পানি পানি ঢুকছে, এভাবে চললেও আমারা ঈদ করতো পারুম না’। পানির মধ্যেই ভাসতে হইবো’।

পূর্ণিমায় সৃষ্টি জোয়ারের প্রভাবে এবং বাঁধ ভেঙে প্লাবিত শুধু আনোয়ারা ও নুর নাহার নয়, তাদের মতো অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি। জোয়ার এবং ভাটার ওপর নির্ভর করেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।  

ভোলা সদরের ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম ছাড়াও জেলার অন্তত ৩০ গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, সোমবার(০৪ জুলাই) বিকেলে মেঘনার পানি বিপদসীমার ৩ দশমিক ৬৯ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। এতে নিচু এবং বাঁধের ভেতর ও বাইরের অংশ ছাড়াও ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, তিনদিন ধরে জোয়ারে পানি প্রবেশ করায় বন্যা দুর্গত এলকায় এখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে পানি বাহিত রোগ।
সদরের ইলিশা ও রাজাপুর ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।  

পানি থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘরের উঁচু স্থানে কেউবা ঘর থেকে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। রোজার মধ্যে অনেকেই ইফতার সামগ্রী তৈরি করতেন পারেননি, শুধু পানি খেয়ে ইফতার করতে হয়েছে অনেককে।

কালুপুর আদর্শ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনার তীরের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত।  সেখানকার বাসিন্দা হনুফা, কল্পনা, আমেনা, ইয়াসনুর, নুরুল হক, জেসমিনসহ অনেকেই জানান তাদের দুর্ভোগের কথা।  

তারা বলেন, জোয়ারের পানিতে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ তাদের খোঁজ খবর নেয় না। আশ্রয় নেওয়ার কোনো ঠিকানা নেই তাদের। ঈদ ঘনিয়ে এলেও ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে পারেনি তারা।

বানভাসি জুলেখা ও সালমা বলেন, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে ভাসি, তবুও বাঁধ নির্মাণ করা হয় না। তাই নদীর পাড়ে সব মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আমাদের ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা-কাপর কিনে দিতে পারিনি’।

এদিকে, খবর নিয়ে জানা গেছে জেলার তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলা ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানে ২/৩ ফটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে বেশিরভাগ এলাকা।  

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাইবো) নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে জানান, জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে কাজ চলছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের আগেই দুর্গত এলাকায় ভিজিএফ ও ভিজিডি বিতরণ করা হবে। এর আগেও দুর্গত এলাকার মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৬
পিসি/


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।