ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

চরাঞ্চলে নারীরা এখনও অবহেলিত

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
চরাঞ্চলে নারীরা এখনও অবহেলিত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উপকূল ঘুরে এসে: অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’। কিন্তু ভোলার গ্রামের চিত্র যেন ভিন্ন।

এখানে নারী-পুরুষ সমান অধিকারের বিষয়টি কাগজে-কমলেই সীমাবন্ধ। সেখানে আজও নারীরা বিভিন্ন সমস্যা আর সুবিধা-বঞ্চিত হয়ে আছেন। অনেক সময়ই বঞ্চিত হন ন্যায্য অধিকার, মজুরি কিংবা কাজের স্বীকৃতি থেকে।

শোষণ-বঞ্চনা আর অবহেলায় কাটছে তাদের দিন। এ বিষয়ে সরকার কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা থেকেও তাদের খোঁজ নেওয়া হয়না বলে অভিযোগ নারীদের।  
 
তাদের অভিযোগ, নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। কি অবস্থায় আছেন ভোলার নারীরা তাও জানার আগ্রহ নেই যেন কারো।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, গ্রামে নারীদের সঙ্কটের কোনো শেষ নেই। সেখানে নারীদের সুযোগ-সুবিধা ও ন্যায্য অধিকার দেওয়া হয়না। আজও সৃষ্টি হয়নি তাদের জন্য কাজের সুবিধা আর ন্যায্য মজুরি। তবুও তারা প্রয়োজনের তাগিদেই রান্না-বান্না আর ঘর সংসারের কাজের বাইরেও শ্রম বিক্রি করেন।
 
কিন্তু সেখানে তারা চরমভাবে বঞ্চিত। পুরুষদের মতো সমানভাবে লড়ে গেলেও যেন তারা বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছেন।

মদনপুরের আব্দুর রবের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বাইরে কাজ করতে হয়। তার মধ্যে আবার সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব আছে। সারাদিন বাইরে কাজ করে একজন পুরুষ পান ৩৫০ টাকা, কিন্তু আমাদের দেন মাত্র ১৫০ টাকা। প্রতিবাদ করলে বলে, ‘আপনি মহিলা’ এ বলেই চলছে তাদের অবহেলা।

মেদুয়ার শাহিদা বলেন, নারী-পুরুষ সমান অধিকারের কথা বলা হলেও আমরা অনেক কম মজুরি পাই।
 
দিন মজুর হারুন মালের স্ত্রী রুব্বান বলেন, আমরা নারী বলে আমাদের কাজে নিতে চায় না, আমরা আমাদের অধিকার চাই। কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা চাই।

মদনপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিনমজুর বেল্লাল হোসেনের স্ত্রী রাহিমা বলেন, স্বামী আয়-রোজগার করলে দু’মুটো আহার জোটে। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। পরিবারের উপার্জন বাড়াতে খেত-খামারে কাজ করতে চাই। কিন্তু আমরা নারী বলে আমাদের কাজে নিতে চায়না, কাজ পেলে অভাবটা ঘুচতো।

উপকূলের বিভিন্ন চর ঘুরে নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের মানুষ মূলত মাছ ধরে, দিনমজুরি করে কিংবা খেত-খামারে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে কাজ করেন। তবে, ন্যায্য মজুরি পান না তারা। এছাড়াও বিচার-সালিশে অবহেলিত তারা। অনেক সময়ই ন্যায় বিচার থেকে তারা বঞ্চিত হন।

পড়ালেখা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে নারীরা। তারা পুরুষদের মতো সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হলেও তাদের সুযোগ দেওয়া হয়না। চলতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। প্রায়শই কাজ করতে গিয়ে তারা বখাটেদের হাতে প্রায়ই উত্ত্যক্তের শিকার হন।
 
ভোলা উপকূলের চর ও গ্রামগুলোতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসছে না কেউ। চরাঞ্চলগুলোতে সরকারি কিংবা বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারাও পরিদর্শনে যান না। ফলে অবহেলিত নারীদের অবস্থা পরিবর্তনে এগিয়েও আসেন না কেউ।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী বিলকিস জাহান মুনমুন বলেন, চরাঞ্চলে নারী অধিকার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। আমরা তারা সহ জেলার নারীদের অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি।

চরাঞ্চলের নারীদের অধিকার রক্ষা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

ভোলা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বেগম জেবুন্নেছা বলেন, জেলার চরাঞ্চলে নারীদের খাদ্য সহায়তা, প্রশিক্ষণ, ঋণ, দরিদ্র মা’দের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালু আছে। জেলায় ১২ হাজার ৯৩৮ জন নারী ভিজিডি, ১ হাজার ১৫০ জন নারী দুগ্ধকালীন, ৩ হাজার ৯০৩ নারী মাতৃকালীন ভাতা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
এমজেড /জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।