ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যান

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৩
দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যান

সিলেট: দুর্লভ ও বিপন্ন হয়ে পড়া দেশি-বিদেশি ২৪ জাতের ৭০০ বাঁশের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যান (ন্যাশনাল ব্যাম্বু পার্ক)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী সিলেট শহরতলীর বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট স্কুল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (এফএসটিআই) ভেতরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলক উন্মোচন করে উদ্যানের উদ্বোধন করেন।



‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেট শহরতলীর বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট স্কুল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চত্বরে টিলাসহ তিন একর জায়গা জুড়ে এ উদ্যান গড়ে তোলা হয়। এতে রয়েছে নানা জাত আর বাহারি নামের বাঁশ।

উদ্বোধন শেষে প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “সিলেটের বৃষ্টিপ্রবণ ও পরিবেশগত অনুকূল বৈশিষ্ট্যের কারণে এ এলাকাকেই উদ্যানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ”

তিনি জানান, সিলেটে যত প্রজাতির বাঁশ আছে, বাংলাদেশে আর কোথায় এত প্রজাতির বাঁশ নেই। কিন্তু, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বাঁশের প্রজাতি।

সিলেটের বাঁশ উদ্যান পর্যটন বিকাশে ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের গবেষণার একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশের প্রধান বন সংরক্ষক।

তিনি বলেন, “পর্যটন এলাকা সিলেটের পর্যটন বৈচিত্র্যে ও মানুষের চিত্তবিনোদনে বাঁশঝাড় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গবেষণার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সব প্রজাতির বাঁশ একই স্থানে পাওয়ার একটি সুযোগও তৈরি হলো। ”

দেশে বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশে বনায়ন ধ্বংসের পরিমাণ এক দশমিক তিন ভাগ। প্রতিবছর এই বনায়ন করতে হলে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা, যা বাজেটে দেওয়া হয় না। ”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক হারাধন বণিক, বন সংরক্ষক  (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) শফিউল আলম চৌধুরী, ফরেস্ট স্কুল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল বাশার মিয়াসহ বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা।
 
বন বিভাগ জানায়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ উদ্যান জাতীয় পর্যায়ের প্রথম কোনো উদ্যোগ।

জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-টিলা-বনের প্রাকৃতিক সমৃদ্ধির ফলে বাঁশের ব্যাপক উৎপাদন রয়েছে। কিন্তু, সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় নানা জাতের বাঁশ ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। এ বিলুপ্তি ঠেকাতে ও বাঁশের উৎপাদন জনপ্রিয় করতে সিলেট বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলতি অর্থবছরে একটি প্রস্তাবিত প্রকল্পের বাস্তবায়িত রূপ হচ্ছে, জাতীয় বাঁশ উদ্যান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বাঁশ রোপন এলাকা ঘুরে দেখিয়ে সিলেট সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবুল বাশার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘সব প্রজাতির বাঁশের সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ভারতের আসামের করিমগঞ্জ থেকে ছয় প্রজাতির বাঁশ নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো বিরল প্রজাতির বাঁশ এখানে রোপনের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ”

তিনি বলেন, ‘‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী-গবেষকদের গবেষণাতেও সহায়তা হবে। ”

বাঁশ উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, ফরেস্ট স্কুল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুবিশাল এ প্রতিষ্ঠান চত্বরের পরিত্যক্ত দুটি টিলা ও সমতল ভূমির প্রায় তিন একর জায়গা উদ্যান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রবেশমুখে প্রধান ফটকে জাতীয় বাঁশ উদ্যানের নাম সংবলিত সাইনবোর্ডে বাঁশের জাত, নাম ও উদ্যানের তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।

চারা রোপন থেকে পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বন বিভাগের রেঞ্জার মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বনকর্মীদের একটি দল। উদ্যানের প্রথমভাগে রয়েছে, সোনালীসহ দুর্লভ সব জাতের বাঁশ। ‘কলসি’ নামে এক প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, যেগুলোর বেড়ে ওঠা বৈচিত্র্যময়। এছাড়া কলসির পাশাপাশি রয়েছে বোতল, কালী, রঙ্গন, কঞ্চি, মৃতিঙ্গা, টেংগা, বরুয়া, বুদুম, বেতুয়াসহ সিলেট অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ২৪ জাতের বাঁশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৩
এসএ/সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।