ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কমে যাচ্ছে জাবির শিয়ালের সংখ্যা

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৩
কমে যাচ্ছে জাবির শিয়ালের সংখ্যা

জাবি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে, নির্বিচারে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের ফলে ক্যাম্পাসের অন্যসব প্রাণীর মতো কমে যাচ্ছে শিয়ালের সংখ্যাও।



এক সময় আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা হলেই শোনা যেত শিয়ালের ডাক। সন্ধ্যায়তো বটেই অনেকসময় ভর দুপুরেও ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে দেখা মিলত শিয়ালের। কিন্তু নির্বিচারে বন-জঙ্গল পরিষ্কারের ফলে বিনষ্ট হয়ে গেছে এদের আবাস। শিয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মতো হুক্কা-হুয়া ডাকও এখন আর শোনা যায় না।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্যাম্পাসে যে পরিমাণ শিয়াল রয়েছে সেগুলো রক্ষা করা গেলেও বিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচে যাবে এ প্রাণীটি। তবে এজন্য ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে দু’ধরনের শিয়ালের দেখা যায় । পাতি ও খেঁক শিয়াল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাতি শিয়াল বা Asiatic Golden Jackal এর দেখা মেলে। যার বৈজ্ঞানিক নাম Canis aureus. বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানেই এ জাতের শিয়াল দেখা যায়। তবে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিলেটের বনগুলোতে এদের সংখ্যা বেশি।

পাতি শিয়াল সাধারণত বনের গভীরে গর্ত করে বসবাস করে। মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে বাইরে আসে, আবার ফিরে যায় গর্তে।

এ জাতের শিয়ালের প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য ইঁদুর। এতে একদিকে যেমন কৃষকের উপকার হয় হয়, তেমনি এটি রক্ষা করে প্রকৃতির ভারসাম্যও। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা খেয়ে আমাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্নও রাখতে সহায়তা করে এরা।  

শিয়ালের চামড়া, মাংস, চর্বি প্রভৃতি লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বর্তমানে শিয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ এটা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে পাতি শিয়ালের প্রজনন কাল। গর্ভকালীন সময় ৫৮ থেকে ৬৫ দিন। মাটির গর্তে বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চার সংখ্যা ৩ থেকে ৮ টি পর্যন্ত হতে পারে। দুধের পাশাপাশি মা তার বাচ্চার জন্য মুখে করে শিকার নিয়ে আসে। আবার আধা হজম খাবার বমি করেও বাচ্চাকে খেতে দেয়। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা দুধ পান করে।

পুরুষ পাতি শিয়াল ১০ মাস বয়সে এবং স্ত্রী পাতি শিয়াল ১৮ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয়। পাতি শিয়াল প্রায় ১২ বছর বাঁচে।

পাতি শিয়াল দেখতে অনেকটা হলদে লাল, কালচে ভাব। নাকের অগ্রভাগ কালো। এর দৈর্ঘ্য ১০০ সেন্টিমিটার। দাঁড়ানো অবস্থায় উচ্চতা ৩৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৮ থেকে ১১ কেজি।

এ জাতের শিয়াল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ বলেন, “পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শিয়ালের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কমছে। একই সঙ্গে কমছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। আর্বানাইজেশনের ফলে শিয়ালের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কারের পাশাপাশি অনেক স্থানে আগুন দিয়েও পোড়ানো হচ্ছে। যা বন্যপ্রাণীর জন্য রীতিমতো হুমকি স্বরূপ। ”

তিনি বলেন, “শীতকালে লতাপাতা ও বন-জঙ্গল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে শিয়ালসহ অন্যপ্রাণী লুকানোর কোনো জায়গা পায় না। তারপরও যেগুলো আছে সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল তারা যাবে কোথায়?”

অধ্যাপক আজিজ বলেন, “ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ক্যাম্পাসের যেমন উন্নয়নের প্রয়োজন, তেমন জীববৈচিত্র্য রক্ষারও প্রয়োজন। ‘আমার চারপাশ যদি ভালো না থাকে তাহলে আমি ভালো থাকব না’- এ বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। ”

ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। বন-জঙ্গল পরিষ্কার ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই ক্যাম্পাসসহ আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে, পরিসংখ্যান ভবনের পেছনে, রসায়ন ভবনের দক্ষিণ পাশে ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের জঙ্গলের একটি বড় অংশ পরিষ্কার করার কারণে শিয়ালসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে এসব বন্যপ্রাণীর খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটররাও মনে করেন, উপাচার্য ক্যাম্পাসের গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৩
ওয়ালিউল্লাহ/সম্পাদনা: আসিফ আজিজ ও  মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।