ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ইট-পাথরের রাজধানীতে পাখির উৎসবে

মোরশেদ সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৩

ঢাকা: অতিথি পাখিদের ইংরেজীতে বলা হয় migratory--  যার বাংলা অর্থ পরিযায়ী পাখি। বিভিন্ন মৌসুমে বৈরি আবহাওয়া, প্রজনন অথবা খাবারের সন্ধানে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গিয়ে সাময়িকভাবে এরা বসবাস করে, তাই এদের পরিযায়ী পাখি বলা হয়।



অতিথি পাখির গুরুত্ব, পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকা ও শিক্ষার্থীদের বৈচিত্রপূর্ণ সব পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শুক্রবার  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়  পরিযায়ী পাখি উৎসব।

আর এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনসহ পুরো নিচতলা বিভিন্ন আয়োজনে দর্শনার্থী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাবের উদ্যোগে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচার(আইইউসিএন), বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এর সহযোগীতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

১০ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে এই আয়োজনে বিভিন্ন স্কুলের  শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় প্রকৃতির নানা চিত্র ও পাখি আকাঁ , পোস্টার, স্লোগান লেখা প্রতিযোগিতায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য  পাখির আলোকচিত্র  দেখে নাম বলা ও নিজেদের আলোকচিত্র পদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

আয়োজকদের পক্ষ থেকেও দেশি-বিদেশি পাখির আলোকচিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।

প্রথমবারের মতো জবিতে  এই আয়োজন দেখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়ার মা ফারজানা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কংক্রিটের এই শহরে বসবাস করে সন্তানদের পাখি ও প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে বইয়ের সহায়তা নিয়ে থাকি। অন্তত  উৎসবের মাধ্যমে হলেও শিক্ষার্থীরা এসবের পরিচয় জানতে পারে।

সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র জহুল পিউরিফিকেশন জানায়,  চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে গ্রামের দৃশ্য এ‍ঁকেছে । দেশি- বিদেশি অনেক পাখির নাম জেনেছে, ছবি দেখেছে।

আবার চামচ ঠোঁটু বাটান,  নর্ডমেনের সবুজ পা, কালালেজ জৈরালী, কালামাথা কাস্তেচড়া, ইউরেশিয় গুলিন্দ, বড় নট, ধলাগলা মানিকজোড়, কালামানিক জোড় আরও নানা বিপন্নপ্রায় পাখির নাম পরিচয় জেনে দারুণ উল্লসিত বাংলাবাজার সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম  শ্রের্ণীর শিক্ষার্থী পূজা ঘোষ, ত্রপা বর্ধন, জেরিন ইয়াসমিন। তারা অংশ নিয়েছে পাখি ও প্রকৃতি সংক্রান্ত পোস্টার ও স্লোগান লেখা প্রতিযোগিতায়।

অংশগ্রহণকারী সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল পাখির পরিচয় বলা ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা।

এই উৎসবে  ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব,  প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারবেশন অফ ন্যাচার(আইইউসিএন), অভিযাত্রী ট্রাভেল ক্লাব, বসন্ত বাউরী, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ আলাদা আলাদ‍া স্টলে পাখি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্রান্ত বই ,পোস্টার, ছবি পদর্শন করে।

উৎসবে আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ শিক্ষার্থী , অভিভাবক, দর্শনার্থী সকলের জন্য পাখি সংক্রান্ত কুইজ প্রতিযোগিতা বাড়তি আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে।

সকালে উৎসবের উদ্বোধন শেষে  প্রধান অতিথি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান পুরো উৎসব-স্থল ঘুরে দেখেন। পরে আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমরা যারা উচ্চবিত্ত শ্রেণী-- শখের বশেই হোক আর না বুঝেই হোক  পাখির মাংস খেতে পছন্দ করি।

আবার জীবিকার জন্য অনেকেই পাখি শিকার ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের নিজেদের স্বার্থে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসব বন্ধ করতে হবে। এতে পরিযায়ী পাখির বিলোপ কমে যাবে।

জবি প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইইউসিএন এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার।

নিজেদের স্বার্থেই এসব পাখির সংরক্ষণের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান  অতিথিরা।

দিনব্যাপী উৎসব শেষে বিকেলে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও পাখি বিষয়ক সঙ্গীত, নাটক অনুষ্ঠিত ও  বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

উৎসব শেষে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর এমন আয়োজন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২  ঘন্টা, মে ১১, ২০১৩
এমএমএস/সম্পাদনা: মাহমুদুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।