ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু পরির্তন ইস্যু

মূলধারা ও সামাজিক মিডিয়ার সমন্বয় প্রয়োজন

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৩
মূলধারা ও সামাজিক মিডিয়ার সমন্বয় প্রয়োজন

কক্সবাজার থেকে: জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সামাজিক মিডিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করেই মূলধারার সাংবাদিকতা চর্চার সময় এসেছে। তাই সামাজিক মিডিয়াগুলোর দেওয়া তথ্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

একই সঙ্গে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বাড়াতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের সংবাদ। আর সামাজিক মিডিয়াকে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে হতে হবে আরও দায়িত্বশীল।

সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও গণমাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গ নিয়ে দুইদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনে বক্তারা একথা বলেন।

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের হোটেল ওশেন প্যারাডাইজে এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন প্রায় অর্ধশত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, শিক্ষক ও পরিবেশ গবেষক। বিশ্বের ২২টি দেশ থেকে তারা এসেছেন এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে।

নরওয়ে ভিত্তিক মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।

সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত র‌্যাগনে বার্টে লান্ড। বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আখতার সুলতানা, মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্কের কো-চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এলিজাবেথ আইডে ও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমান।

উদ্বোধনী বক্তব্যে র‌্যাগনে বার্টে লান্ড বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার বাধাগুলো দূর করতে করণীয় দিক নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে নেওয়া কর্মকৌশল সংবাদমাধ্যমে আরও গুরুত্বের সঙ্গে আসবে বলেও প্রত্যাশার ব্যক্ত করেন তিনি।

আখতার সুলতানা বলেন, “কোনো একটি পক্ষের মাধ্যমে এতবড় সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ”

সমাজের সব গোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার ওপর জোর দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কারিকুলামে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির কথাও বলেন আখতার সুলতানা।

এলিজাবেথ আইডে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই এখন জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ”

তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের এখন কেবল রিপোর্ট লিখে প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কি তার গবেষণায়ও সম্পৃক্ত হতে তবে তাদের। ”

প্রথম কর্ম-অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি সংবাদমাধ্যমে কিভাবে আসতে পারে সে নিয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেন ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক জন ভাইড্যাল ও দিল্লিভিত্তিক থার্ডপোলডটনেট এর জলবায়ু গবেষক ও সাংবাদিক জয়দীপ গুপ্ত।

সঞ্চালনা করেন ফিনল্যান্ডের প্যামপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিস্টু কুনেলিয়াস।

এর পরপরই দেখানো হয় হিমালয়ের বরফ গলা নিয়ে সালমান সাঈদের প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী। প্রদর্শনী শেষে এর ওপর আলোচনা করেন মফিজুর রহমান।

এরপর চারটি পৃথক বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হয় চারটি অধিবেশন। বাস্তবচিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিবর্তন তুলে ধরতে ফটোসাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন গণযোগাযোগ ও সাবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাইফুল হক ও নেপাল থেকে আগত সাংবাদিক দীপেশ শ্রেষ্ঠ। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিকতার শিক্ষক জারকা আলী।

এ অধিবেশনে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জলবায়ু ইস্যুতে ফটো সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন দীপেশ শ্রেষ্ঠ। তার সঙ্গে ভিডিওগ্রাফির ঝুঁকিগুলোও তুলে ধরেন সালমান সাঈদ।

জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা করেন নরওয়ের সাংবাদিক লাইজ ম্যারিট কালস্টাড, নেপালের সাংবাদিক কৃতি ভুজু ও বাংলাদেশের একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রূপা।

এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সুইডেনের সাংবাদিক আনা রুজভাল।

সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি জলবায়ু বিষয়ক সংবাদ প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন অধিবেশনের অংশগ্রহণকারীরা।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সাংবাদিকের অ্যাডভোকেসি নিয়ে অপর অধিবেশনে আলোচনা করেন নরওয়ের সাংবাদিক এরিক মারটিনিউসেন, পাকিস্তানের ইতরাত বশির আহমেদ ও বাংলাদেশের বৈশাখী টেলিভিশনের চিফ নিউজ এডিটর রাহুল রাহা। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন মফিজুর রহমান।

মূলধারার সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে জলবায়ু সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন ও  রাশিয়ার গবেষক দিমিত্রি ইয়াগোদিন। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ফিনল্যান্ডের প্যামপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিস্টু কুনেলিয়াস।

এ অধিবেশনে বক্তরা মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমগুলোর যোগাযোগ ও পারস্পরিক নির্ভরতা বাড়ছে বলে মত দেন। তারা দু’টি মাধ্যমের সমন্বিত কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব বলেও মত দেন।

এসব অধিবেশনের পর প্লেনারি সেশনে জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেন ঢাকায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন।

সংলাপের দ্বিতীয় দিনে থাকবে ‘মিডিয়া মিটস ক্লাইমেট: দ্য চ্যালেঞ্জ ফর গ্লোবাল জার্নালিজম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। ফিনল্যান্ডের প্যামপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিস্টু কুনেলিয়াস ও মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্কের কো-চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এলিজাবেথ আইডে যৌথভাবে এ বইটি লিখেছেন।

এ দিনেও চলবে চারটি কর্ম অধিবেশন। একটি সুপারিশ তৈরির মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই দিনের কর্মসূচি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৩
এমএমকে/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।