ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিশুদের জন্য লিখে আনন্দ পান জাফর ইকবাল

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
শিশুদের জন্য লিখে আনন্দ পান জাফর ইকবাল শিশুদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন লেখক জাফর ইকবাল। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: তিনি শিশুদের প্রিয় লেখক। শিশুদের জন্য লিখে আনন্দও পান জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাইতো সকলের সামনেই তা বেশ গর্ব করে হাসতে হাসতে বলে দিতে পারেন তার কোনো এক ছোট্ট ভক্তের ভালোবাসার ভাষায়, ‘স্যার, আপনি যদি কখনো বড়দের জন্য লিখেন, তাহলে কিন্তু আপনার পা ভেঙে রেখে দেবো!’ 

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ ও চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত একুশে বইমেলার ৯ম দিন লেখক সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে কথা বলছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশু সাহিত্য কি সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে?’ শীর্ষক আলোচনা সভা। শিশু সাহিত্যের এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। অতিথি হিসেবে কথা বলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

এসময় তিনি তার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ ও নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হুমায়ূন আহমেদ জানতেন তিনি লেখক হবেন। হুমায়ূন আহামেদ কখনোই জনপ্রিয় হওয়ার জন্য লিখতেন না। তিনি মারা যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম তার জনপ্রিয়তা কতটুকু। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই লিখেছে, তাই কখনো জনপ্রিয় হওয়ার কথা ভাবিনি। আমি বাচ্চাদের জন্য লিখি। তারা সত্যিকারের পাঠক। তারা কখনো খুশি করার জন্য তোষামোদি করে না। তাই তাদের জন্য লিখে আনন্দ পাই। আমাকে বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা সাহিত্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে যদি শিশু সাহিত্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হতো তাহলে আরও ভালো লাগতো!’

জাফর ইকবাল বলেন, আমি কখনোই জানতাম না আমি লেখক হবো। আমি যখন লেখা শুরু করেছিলাম তখন দেশের বাইরে ছিলাম। রুমমেটকে লেখার বিষয়টি বলতে না পেরে বলেছিলাম চিঠি লিখছি। আমার সে লেখা পরবর্তীতে ছাপানো হয়। কিন্তু এর পাঠক কেমন বা বইটা সম্পর্কে মানুষের মন্তব্য কি সেটা জানতাম না। একদিন সে সময়কার জনপ্রিয় লেখক জাহানারা ইমামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। তিনি আমাকে বললেন ‘তোমার লেখা আমি পড়েছি। লেখা ভালো হয়েছে। ’ এ একটা কথায় আমি উৎসাহি হই। এরপর থেকে আর কখনো লেখা বন্ধ করিনি।

'আমার সব লেখায় মুক্তিযুদ্ধের কিছু অংশ থাকে। এটা নিয়ে অনেকের মন্তব্য থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি তারা ছাড়া কেউই সেই নৃশংতসতা অনুভব করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের এমন নৃশংসতা দেখে আমরা ৭১ পার করেছি। তাই আমি শিশুদের জন্য বই লেখার সময় মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করি। শিশুসাহিত্যিকদের কেউ এখন মূল্যায়ন করে না। তাই অনেক ভালো লেখকরা হয়তো শিশুদের জন্য লিখেন না। '

তিনি বলেন, ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেয়ে জঘন্য ঘটনা হলো তার ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর সর্বপ্রথম শিক্ষার উন্নয়নে হাত দিয়েছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক বছরের মধ্যে ৮০’র দশকে কোন এক রিকশাওয়ালাকে আমি বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত একটি পুরাতন টাকার নোট দেওয়ার পর সে জিজ্ঞেস করছিলো ‘এ লোক কে’। তারা বঙ্গবন্ধুকে চিনেই না। তাই আমি সবসময় শিশুদের জন্য লিখলেও তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেওয়া চেষ্টা করি। ’

এর আগে অধিবেশনের প্রথম পর্বের বিষয় ছিলো ‘কথা সাহিত্যের সমৃদ্ধি, ঐতিহ্য ও বর্তমান ধারা’। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন কথা সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই। আলোচক ছিলেন কথা সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, আনিসুল হক ও বাদল সৈয়দ।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এমএ/টিসি/এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।