ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

হকিংয়ের নতুন বই ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’

রানা রায়হান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১০
হকিংয়ের নতুন বই ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’

মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহেইমার প্রায়ই একটি কথা বলতে পছন্দ করতেন। আর তা হচ্ছে, পদার্থবিদ্যা ও কবিতা একই বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।

‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’-এর লেখক স্টিফেন হকিং ও লিওনার্দ ম্লোদিনাও বলতে চেয়েছেন যে, পদার্থবিদ্যা ও অধিবিদ্যার মধ্যে দূরত্ব কমে আসছে।

হকিং ও ম্লোদিনাও বইটিতে বলছেন, ‘পদার্থবিদ্যার অমোঘ নিয়মের ফলাফল আজকের মহাবিশ্ব। এর সৃষ্টিতে ঈশ্বরের সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। মাধ্যাকর্ষণের মতো সূত্র থাকার কারণে, মহাবিশ্ব নিজেকে শূন্য থেকেই সৃষ্টি করতে পারে এবং পারবে। স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টির যুক্তি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শূন্যতার চেয়ে বরং কিছু একটার অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা জানতে পারছি, এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কারণ কী, আর আমাদেরই বা অস্তিত্বের কারণ কী।

বলা বাহুল্য, এর মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি আইজ্যাক নিউটনের তত্ত্ব নাকচ করলেন। নিউটনের মতে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়নি। ঈশ্বরের মাধ্যমে এটি গতিপ্রাপ্ত হয়েছে।

এর আগে, হকিং-এর বিখ্যাত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এ পৃথিবীর সৃষ্টিতে ঈশ্বরের হাত আছে এই সম্ভাবনার কথা তিনি নাকচ করেননি।

বইটিতে বলা হয়েছে, আজকের বহুত্ববাদী যুগে আমাদের অনেকগুলো তত্ত্ব দরকার যার মাধ্যমে আমরা বহুবিশ্বকে (মাল্টিভার্স) ব্যাখ্যা করতে পারি। মহাবিশ্বে এমন একটা পরিবেশ বিরাজ করছে যেখানে কৃষ্ণগহ্বর, অতিকৃষ্ণ গহ্বর, কৃষ্ণবস্তু, কৃষ্ণশক্তি, এম-তত্ত্ব, বিকল্প অতীত ও বিকল্প ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই কেবল একক মহাবিশ্ব বা এমনকি একগুচ্ছ মহাবিশ্বের ব্যাপারেই নয়, এর বাইরেও আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আর সব মহাবিশ্বে যে একই সূত্র বা নিয়ম কার্যকর রয়েছে, আমাদের মহাবিশ্বের মতো, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।

এর অর্থ এই নয় যে, মাল্টিভার্সের প্রতিটি অংশ তার প্রতিবেশীর চেয়ে মূলগতভাবে আলাদা। তবে আমরা বিতর্ক তুলতে পারি, একগুচ্ছ বৈজ্ঞানিক সূত্র একক মহাবিশ্বের েেত্র বা একটি ছায়াপথের েেত্র প্রযোজ্য হলেও অন্য মহাবিশ্ব বা ছায়াপথের েেত্র নাও খাটতে পারে। এমনকি যে সূত্রগুলো আমরা স্বতঃসিদ্ধভাবে মেনে নিয়েছি, যেমন আলোর গতিবিষয়ক সূত্র, তা নিকট-অসীমের মহাবিশ্বগুলোর েেত্র প্রযোজ্য নাও হতে পারে।

এই বইটি মানবজাতির মাধ্যমে বিকাশ লাভ করা বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক ও মহাজাগতিক তত্ত্বের দিকে আমাদের নিয়ে যায়। একেবারে শুরু থেকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যতো ব্যাখ্যা এসেছে সবই আমরা জানতে পারি। বইটির শুরু হয়েছে প্রাচীন গ্রিক মনীষীদের জেগে ওঠার সময় থেকে। বিজ্ঞানী অ্যারিস্টার্কাস (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩১০ থেকে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২৩০) হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন, পৃথিবীর চেয়ে আকারে সূর্য বড়। অন্যান্য নত্রের মতো আমাদের পৃথিবীও একটি কপথে ঘোরে।

লেখক দুইজন বিতর্ক তুলেছেন, প্রকৃতি যদি একগুচ্ছ সূত্রের অধীনেই চলে তাহলে তিনটি প্রশ্ন উত্থিত হয়: ১. ওই সূত্রগুলোর ধরন কি? ২. সেগুলোর কি ব্যতিক্রম আছে (যেমন অলৌকিক ঘটনাসমূহ)? ৩. এখানে কি কেবল সমরূপ একগুচ্ছ সূত্র রয়েছে?

‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইনে’ এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়াস পেয়েছে। পরিবর্তনশীল বাস্তবতার মডেলের ওপর আমরা কিভাবে নির্ভরশীল তাও দেখানো হয়েছে। লেখকদের যুক্তিগুলো পৃথিবী, মহাবিশ্ব, বহুবিশ্বকে দেখার কাছাকাছি নিয়ে যায় আমাদের। যদিও এর আগের প্রজন্ম এটাকে অতিপ্রাকৃতিক বলে বাতিল করে দিয়েছিলো। এই বইয়ের সংপ্তি পরিসরে হকিং ও ম্লোদিনাও একগুচ্ছ চিন্তাসম্পদকে জড়ো করেছেন, যা সব দুর্বোধ্য জটিলতা সত্ত্বেও আধুনিক পদার্থবিদ্যা বুঝতে আমাদের সহায়তা করে।


স্টিফেন হকিং সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই। বইটির আরেকজন লেখক পদার্থবিদ লিওনার্দ ম্লোদিনাও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে অধ্যাপনা করেন। প্রকাশের আগেই ব্যাপকভাবে আলোচিত বইটি ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০০, দাম ২৮ মার্কিন ডলার। বইটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বানট্যাম বুকস।

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ও এএফপি অবলম্বনে

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।