ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (১ম পর্ব)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৮
দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (১ম পর্ব) দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (১ম পর্ব)

ডানিয়েল গেরহাড ব্রাউন (জন্ম ২২ জুন, ১৯৬৪) একজন আমেরিকান থ্রিলার ঔপন্যাসিকএনজেলস অ্যান্ড ডিমনস (২০০০), দ্য ভিঞ্চি কোড (২০০৩), লস্ট সিম্বল (২০০৯), ইনফারনো (২০১৩) এবং অরিজিন (২০১৭) তার বিখ্যাত থ্রিলার উপন্যাসএসব উপন্যাসের নায়ক রবার্ট ল্যাংডনক্রিপ্টোগ্রাফি, গোপন চাবি, সিম্বল, কোড এবং কন্সপিরেসি থিওরির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে, সব ধরনের গুপ্ত রহস্য ভেদ করে চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে তাকে সমস্যার সমাধান করতে দেখা যায়তার বইগুলো এযাবত ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছেএবং ২০১২ সাল পর্যন্ত মোট ২০০ মিলিয়নেরও বেশী কপি বিক্রি হয়েছেএনজেলস অ্যান্ড ডিমনস, দ্য ভিঞ্চি কোড এবং ইনফারনো-এর কাহিনী অবলম্বনে তিনটি সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে

ব্রাউনের এসব উপন্যাসে প্রধান চরিত্র, ল্যাংডনপাশাপাশি এসবে মটিফ হিসেবে এমনভাবে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু এবং খ্রিস্টানত্ব অন্তর্ভূক্ত হতে দেখা যায়, যা বিতর্ক উসকে দেয়তার থ্রিলার নোভেল দ্য ভিঞ্চি কোড এর শুরুতেই প্যারিস ল্যুভর মিউজিয়ামে এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় প্রধান চরিত্র ‘সিম্বলজিস্ট’ প্রফেসর রবার্ট ল্যাংডনের নামরহস্য ভেদ করতে আরও এগিয়ে আসেন ক্রিপ্টোলজিস্ট সফি নাজেঘটনার অব্যবহত পরই এ দু’জন, তাদের প্রতীক ও ক্রিপ্টোগ্রফির জ্ঞান ব্যবহার করে, পরস্পরবিরোধী গুপ্তসংঘ প্রায়োরি অব সিয়ন ও অউপাস ডেই-এর অজানা সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড আবিষ্কার করতে শুরু করেনএক পর্যাযে তারা জানতে পারেন, সহচর মেরি মাগদালিনের গর্ভে যিশু খ্রিস্টের সন্তান জন্ম এবং তার বংশধরদের টিকে থাকার মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে গোপন এই বিবাদের সূত্রপাত... 

দ্য ভিঞ্চি কোড

মূল: ড্যান ব্রাউন

ভাষান্তর: সোহরাব সুমন

অধ্যায় ১

রবার্ট ল্যাংডন মন্থরভাবে জেগে ওঠেন।

অন্ধকারে একটি ফোন বাজছে- ঝনঝনে, অপরিচিত একটি শব্দ।

তিনি বিছানার পাশে বাতি হাতড়ান এবং সেটি জ্বালান। আড় চোখে চারপাশে চোখ বুলাতেই তিনি একটি মখমলের রেনেসাঁ শোবার ঘর দেখতে পান। তাতে ষোড়শ লুই-এর আসবাব, হাতে-ফ্রেসকো করা দেয়াল, এবং চার-খুঁটির প্রকাণ্ড একটি মেহগনির বিছানা।

এ আমি কোথায় আছি?

তার বিছানার খুঁটিতে গোসলের আগে পরবার জন্য যে আংরাখাটি ঝুলছে তাতে এই মনোগ্রাম: হোটেল রিট্‌স প্যারিস।

ধীরে ধীরে, তার সেই ঝিমানো ভাব কাটতে শুরু করে।

ল্যাংডন রিসিভার তোলেন। “হ্যালো?”

“মঁসিয়ে ল্যাংডন?” এক পুরুষ কণ্ঠ বলে। “মনে হচ্ছে আমি আপনাকে ঘুম থেকে জাগাইনি?”

হতভম্ব, ল্যাংডন বিছানার পাশে রাখা ঘড়ির দিকে তাকান। রাত্রি বারোটা বেজে বত্রিশ মিনিট। সে মাত্র একঘণ্টা ঘুমিয়েছে, তবে নিজেকে তার মরার মতো মনে হচ্ছে।

“কনসিয়েশ*(হোটেলকর্মী) বলছি, মঁসিয়ে। এই অনাহূত প্রবেশের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তবে আপনার একজন দর্শনার্থী আছেন। সে মনে করছে এটি জরুরি। ”

তখনও ল্যাংডনের কাছে সবকিছু ঝাপসা লাগছে। একজন দর্শনার্থী? এবার পাশের টেবিলের উপর রাখা ভাঁজ করা একটি ফ্লায়ারের ওপর তার চোখ আটকে যায়।

দ্য আমেরিকান ইউনিভারসিটি অব প্যারিস

মহাসমারোহে উপস্থিত

রবার্ট ল্যাংডন-এর সঙ্গে একক সন্ধ্যা

অধ্যাপক, ধর্মীয় প্রতীকবিদ্যা

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

ল্যাংডন গোঙান। আজ রাতের বক্তৃতা- শাথ্ ক্যাথিড্রো-এর পাথর সমূহে লুকিয়ে থাকা পেগান প্রতীকবাদের এক স্লাইড প্রদর্শনী- সম্ভবত দর্শকদের মাঝে উপস্থিত কোনো রক্ষণশীল ফাদার ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

“আমি দুঃখিত,” ল্যাংডন বলেন, “তবে আমি ভীষণ ক্লান্ত এবং..”

“মেএ, মঁসিয়ে,” কনসিয়েশ অনুরোধের স্বরে, জরুরি কিছু বলছে এমনভাবে নিচু গলায় ফিসফিস করে বলে। “আপনার অতিথি খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন লোক। ”

ল্যাংডন খানিকটা সন্দেহের দোলাচলে পড়ে যান। ধর্মীয় চিত্রকর্ম এবং ধর্মীয় প্রার্থনার প্রথা প্রতীকবিদ্যা তাকে বিশ্বের শিল্প জগতে অনিচ্ছুক এক তারকায় পরিণত করেছে এবং ভ্যাটিকানে বিপুলভাবে প্রচারিত এক ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার জন্য গত বছর ল্যাংডনের গ্রহণযোগ্যতা শতগুণ বেড়ে যায়। তারপর থেকে, তার দরজায় এসে ভিড় করা আত্মাভিমানী ইতিহাসবিদ এবং শিল্প অনুরাগীদের স্রোতকখনই থামতে দেখা যায়নি। “আপনি যদি খুব বেশি দয়ালু হয়ে থাকেন,” যতটা পারা যায় সৌজন্যবোধ বজায় রেখে, ল্যাংডন বলেন, “আপনি কি লোকটির নাম এবং নম্বর দিতে পারেন, এবং তাকে বলবেন মঙ্গলবার প্যারিস ছাড়বার আগে আমি তাকে ফোন করবার চেষ্টা করব? ধন্যবাদ। ” কনসিয়েশ আপত্তি জানাবার আগেই তিনি টেলিফোন ছেড়ে দেন।

এবার বসে, তার পাশে রাখা গেস্ট রিলেশন হ্যান্ডবুক-এর দিকে তাকিয়ে ল্যাংডন ভ্রু কুঁচকান, যার মলাটে দম্ভ করে লেখা: আলোর শহরে একটি শিশুর মতো ঘুমান। প্যারিস রিট্‌স-এ সুখনিদ্রা যান। তিনি পিছু ফেরেন এবং ক্লান্তভাবে কামরার অপর পাশের বড় আয়নার দিকে তাকান। যে লোকটি পেছন থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে একজন অপরিচিত- বিধ্বস্ত আর ক্লান্ত।

তোমার ছুটি দরকার, রবার্ট।

গেলো বছরটি তার ওপর গুরুতর এক মাশুল আদায় করেছে, কিন্তু তিনি বুঝতে পরছেন না এর কোনো প্রমাণ আয়নায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আজ রাতে তার স্বাভাবিক তীব্র নীল চোখ দু’টি ঘোলাটে আর দাবা মনে হচ্ছে। তার শক্ত চোয়াল আর টোল পড়া থুতনি ছোট ছোট কালো দাড়িতে ঢাকা। তার কপালের দু’পাশ ঘিরে, অগ্রসরমান ধূসর উজ্জ্বলতা, কালো চুলের ঝোপের গভীরে পথ করে নিয়েছে। কেবল ধূসরই তার পাণ্ডিত্যের গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে, তার নারী সহকর্মীরা কথাটা বলে বেড়ালেও, ল্যাংডন এর মানে ভালোই জানেন।

যদি বোস্টন ম্যাগাজিন আমাকে এখন দেখতে পেত।

গত মাসে, ল্যাংডনকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে, বোস্টন ম্যাগাজিন তাকে সবচেয়ে সেরা দশ চক্রান্তকারী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে- সন্দেহজনক এই সম্মানের কারণে তাকে তার হারভার্ড সহকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া অনবরত জ্বালাতনের ধকল সামালাতে হয়েছে। আজরাতে, বাড়ি থেকে তিন হাজার মাইল দূরে, দেওয়া বক্তৃতা থেকে পাওয়া স্বীকৃতি তাকে আবারও খোঁজ করবার জন্য সামনে নিয়ে এসেছে।

“ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ...” আমেরিকান ইউনিভারসিটি অব প্যারিস-এর জনাকীর্ণ দোফিন প্যাভিলিয়ন জুড়ে অতিথ্যকর্ত্রী ঘোষণা করেন, “আজ রাতে আমাদের অতিথিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি অসংখ্য বইয়ের লেখক: দ্য সিম্বোলজি অব সিক্রেট সেক্টস, দ্য এন অব ইলুমিনেটি, দ্য লস্ট ল্যাঙ্গুয়েজ অব ইডিও গ্রামস, এবং যখন আমি বলেছি তিনি ধর্মীয় প্রতিমাবিদ্যার ওপর বই লিখেছেন, তখন আমি আক্ষরিক অর্থে সেটাই বুঝিয়েছি। আপনাদের অনেকেই তার বইগুলো শ্রেণীকক্ষগুলোতে ব্যবহার করছেন। ”

ভিড়ের মাঝে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবল উৎসাহে মাথা ঝাঁকায়।

“আজরাতে কারিক্যুলাম ভিটা আকারে তার চিত্তাকর্ষক জীবন-তথ্য উপস্থাপন করে আমি তাকে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবার পরিকল্পনা নিয়েছি। অবশ্য...”

সে সকৌতুকে ল্যাংডনের দিকে তাকায়, যিনি মঞ্চে বসে আছেন। “এমন বিপুল সংখ্যক দর্শক সদস্য আমাকে আরও বেশি সাহায্য করছে, আমাদের বলা উচিত... কৌতুহলী উপস্থাপন। ”

সে বোস্টন ম্যাগাজিন-এর একটি সংখ্যা মেলে ধরে।

ল্যাংডন নুইয়ে পড়েন। এটা আবার সে কোথায় পেল?

উপস্থাপক এর আলাদা অংশে ছাপানো তুচ্ছ প্রবন্ধটির বাছাই অংশ থেকে পড়তে শুরু করেন, এবং ল্যাংডনের মনে হতে থাকে তিনি বুঝি চেয়ারের নিচ হতে আরও নিচে তলিয়ে যাচ্ছেন। ত্রিশ সেকেন্ড পর, সবাই দাঁত বের করে হাসতে শুরু করে এবং সেই মহিলা সবাইকে থামাতে ইশারা করেন। “এবং মিস্টার ল্যাংডন গত বছর ভেটিক্যানের গোপন বৈঠকে তার অস্বাভাবিক ভূমিকা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলতে অস্বীকার করায় আমাদের ষড়যন্ত্র-পরিমাপের মাপকাঠির সূচক সমূহ নিশ্চিতভাবে তাকে জিতিয়ে দেয়। ” উপস্থাপিকা সবাইকে তাড়া দেন। “আপনারা কি এর বেশি কিছু শুনতে চান?”

উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে সমর্থন জানায়।

কেউ একজন তাকে থামান, সে আবারও আর্টিকেলটির দিকে চোখ ফেরালে ল্যাংডন আপত্তি জানান।

“যদিও প্রফেসর ল্যাংডনকে আমাদের তরুণ কোনো পুরস্কারে ভূষিতের মতো একজন সুঠাম-সুপুরুষ বলে গণ্য করা ঠিক হবে না। চল্লিশোর্ধ এই শিক্ষক তার প্রকাশিত যাদুকরী পাণ্ডিত্যের চেয়ে বেশি কিছু। তার বিমুগ্ধ উপস্থিতি অদ্ভুত কোমল এক মন্দ্র স্বর দ্বারা অলঙ্কিত, তার ছাত্রীরা যাকে ‘কানের জন্য মজাদার চকলেট বলে উল্লেখ করে থাকে। ”

সমস্ত হল অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে।

ল্যাংডন আনাড়ি এক হাসি হাসতে বাধ্য হন। সে জানে এর পর কী আছে- “হ্যারিস টুইড-এর হ্যারিসন ফোর্ড” থেকে কৌতুককর কয়েকটি লাইন- এবং আজকে সন্ধ্যায় সবশেষে আবারও হ্যারিস টুইড এবং বারাবরি টারটেলনেক পরা নিরাপদ বলে মনে করায়, তিনি আগেই প্রসঙ্গ বদলাবার সিদ্ধান্ত নেন।

“ধন্যবাদ, মোনিক,” আগেভাগেই তার কাছ ঘেঁষে বক্তৃতা মঞ্চ থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ল্যাংডন বলেন, “বোস্টন ম্যাগাজিন খুব সুন্দরভাবে গল্প ফাঁদতে ওস্তাদ। ” অস্বস্তিকর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি দর্শকদের দিকে তাকান। “এবং যদি আমি খুঁজে বের করতে পারি আপনাদের মাঝে কে এই আর্টিকেলটি সরবরাহ করেছেন, আমি আপনাকে বের করে দেওয়ার জন্য কনস্যুল ডাকবো। ”

সবাই হেসে ওঠে।

“ঠিক আছে, আপনারা সবাই যেমন জানেন, আজ রাতে আমি এখানে এসেছি প্রতীকের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলবার জন্য...”

ল্যাংডনের হোটেল ফোন বেজে উঠে আবারও নীরবতা ভেঙে দেয়। অবিশ্বাসে গোঙাতে গোঙাতে, তিনি রিসিভার তুলেন। “হ্যাঁ?”

যা অনুমান করেছিলেন, সেই কনসিয়েশ। “মিস্টার ল্যাংডন, আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাকে একথা জানাতে ফোন করেছি যে, আপনার অতিথি এখন আপনার কামরার দিকে যাচ্ছে। আপনাকে সতর্ক করা দরকার বলে মনে করছি। ”

ল্যাংডন এবার পুরোপুরি সজাগ হন। “আপনি কাউকে আমার কামরায় পাঠাচ্ছেন?”

“আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, মঁসিয়ে, তবে এমন একজন লোককে... তাকে থামাবার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলার ধৃষ্টতা আমি দেখাতে পারি না। ”

“লোকটি আসলে কে?”

কিন্তু ততক্ষণে কনসিয়েশ ফোন রেখে দিয়েছে।

বলতে গেলে তখনই, ল্যাংডনের দরজায় ধপ করে প্রথম ভারী একটি শব্দ হয়।

অস্থির, লাংডন হুড়মুড় করে বিছানা থেকে নেমে, টেরপান তার পায়ের আঙুলগুলো স্যাভোনরি কার্পেটের মাঝে ডুবে আছে। তিনি হোটেলের আংরাখাটি গায়ে চাপিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যান। “কে?”

“মিস্টার ল্যাংডন? আপনার সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার। ” লোকটির ইংরেজি উচ্চারণ- পরিচ্ছন্ন, কর্তৃত্বব্যঞ্জক স্বর। “আমার নাম লেফটেনান্ট জেরোম কোলে। ডিরেকশন সেন্ট্রাল পুলিশ জুডিশিয়ারি। ”

ল্যাংডন তাকে থামান। বিচারিক পুলিশ? জেডিপিসি হুবহু আমেরিকার এফবিআই-এর মতো। সিকিউরিটি চেইন জায়গা মতো রেখেই, ল্যাংডন ইঞ্চি খানেক দরজা খোলেন। ওপাশ থেকে যে মুখখানা তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তা পাতলা ও ফ্যাকাশে। লোকটি অসম্ভব রোগা, অফিস ইউনিফর্মের মতো নীল রঙের পোশাক পড়া।

“আমি কি ভেতরে আসতে পারি?” এজেন্ট জিজ্ঞেস করে।

আগন্তুকের পাংশু চোখদু’টি তাকে খুঁটিয়ে দেখায় অস্থির, ল্যাংডন ইতস্তত বোধ করেন।

“কী বিষয়ে কথা বলতে চান?”

আমাদের ক্যাপিতেন একটি ব্যক্তিগত বিষয়ে আপনার বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন অনুভব করছেন।

“এখন?” ল্যাংডন ধাতস্থ হন। “মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। ”

“আজরাতে আপনার ল্যুভর কিউরেটরের সঙ্গে সাক্ষাৎ নির্ধারিত ছিল, আমি কি ঠিক বলছি?”

মুহূর্তে ল্যাংডন অস্বস্তিকর এক ধাক্কা অনুভব করেন। আজ রাতে ল্যাংডনের বক্তৃতার পর তার এবং শ্রদ্ধেয় কিউরেটর জ্যাক সোনিয়ার পান করবার জন্য একত্রে মিলিত হবার কথা ছিল, কিন্তু সোনিয়াকে মুহূর্তের জন্যেও দেখা যায়নি। “হ্যাঁ। আপনি এটা কী-করে জানলেন?”

“তার ডেইলি প্ল্যানারে আমরা আপনার নাম পেয়েছি। ”

“অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি বলে আমার বিশ্বাস?”

এজেন্ট ভয়াবহ এক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন এবং সংকীর্ণ খোলা অংশ দিয়ে একটি পোলারয়েড ফটোগ্রাফ এগিয়ে দেন।

ছবিটি দেখার পর, ল্যাংডনের সমস্ত শরীর স্থির হয়ে আসে।

“ঘণ্টা খানেকেরও কিছু সময় আগে ছবিটি তোলা হয়েছে। ল্যুভরের ভেতর। ”

অদ্ভুত ছবিটির দিকে তাকাতেই, তার প্রাথমিক আকস্মিক মনোভাব পরিবর্তন ও প্রচণ্ড ধাক্কা হঠাৎ-ই ক্ষোভের লাভা উদ্গীরণের পথ করে দেয়। “এটি কার কাজ!”

“তার সঙ্গে দেখা করবার পরিকল্পনা এবং প্রতীকবিদ্যায় আপনার জ্ঞান বিবেচনা করে দেখার পর আমরা আশা করছি এই প্রশ্নের জবাব বের করতে আপনি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। ”

ল্যাংডন ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে, তার বিহ্বলতা এবার আতঙ্কে পরিণত হয়। ছবিটি বিভীষিকাময় ও খুবই অদ্ভুত, এর সঙ্গে অনিশ্চিত এক দিজা ভ্যু’র অনুভূতি জেগে ওঠে। বছর খানেকেরও সামান্য আগে, ল্যাংডন এক মৃতদেহের একটি ছবি পেয়েছিলেন এবং একই ধরনের সাহায্যের অনুরোধ। এর চব্বিশ ঘণ্টাপর, ভ্যাটিক্যান সিটির ভেতরে প্রায় তার জীবনটাই হারাতে বসেছিলেন। এখনকার ছবিটি পুরোপুরি আলাদা, এবং দৃশ্যের কিছুটা উদ্বেগজনকভাবে একই রকম পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।

এজেন্ট তার ঘড়ি দেখেন। “আমার ক্যাপিতেন অপেক্ষা করছেন, স্যার। ”

ল্যাংডন নামমাত্র তার কথা শুনতে পান। তার চোখ দু’টি তখনও সেই ছবির দিকে স্থির হয়ে আছে। “এর এই প্রতীক, এবং যেভাবে তার শরীর অস্বাভাবিকভাবে...”

“রাখা আছে?” এজেন্ট আগবাড়িয়ে বলেন।

ল্যাংডন মাথা ঝাঁকান, তাকানো অবস্থায় তিনি ঠাণ্ডা অনুভব করেন। “আমি ভাবতে করতে পারছি না কারও ওপর কে এমন কারতে পারে। ”

এজেন্টকে নির্দয় দেখায়। “আপনি বুঝতে পারছেন না, মিস্টার ল্যাংডন। এই ছবিতে আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন...” সে থামে।

“মঁসিয়ে সোনিয়া নিজেই নিজের এই অবস্থা করেছেন। ”

চলবে…

সোহরাব সুমন সমকালীন একজন কবিজন্ম বেড়ে ওঠা এবং পড়ালেখা ঢাকায়তার মননশীলতা তার সৃষ্টিকর্মেই ভাস্বরকবির নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য প্রচেষ্টা এবং সৃজনশীলতা তার আশপাশের পরিচিত বিশ্ব তার কাব্যিক রূপ-রস-গন্ধ সমেত পাঠকের চেতনায় জীবন্ত হয়ে উঠতে বাধ্যএকনিষ্ঠ এই কবি দীর্ঘদিন যাবৎ কবিতা, ছোটগল্প, সৃষ্টিশীল ফিচার লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করে চলেছেন‘শুধু তুমি কবিতা’, ‘কবিতার বিস্বাদ প্রহর’ এবং ‘ভালোবাসি তোমার ছোঁয়া’ তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘আরববিশ্বের গল্প, ‘মিশরের শ্রেষ্ঠ গল্প, ‘ইরাকের শ্রেষ্ঠ গল্প, ‘ইতালির শ্রেষ্ঠ গল্প’ এবং ‘যুদ্ধের মেয়ে’ তার এযাবৎ প্রকাশিত অনুবাদ গল্পসংকলন‘স্পেনের শ্রেষ্ঠ গল্প’ তার সম্পাদিত গল্পসংঙ্কলন‘দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পলো’ তার অনূদিত অভিযাত্রিক ভ্রমণকাহিনীবিখ্যাত মার্কিন লেখক এবং ইতিহাসবিদ হ্যরল্ড ল্যাম্ব রচিত সুলেমান দ্য​

ম্যা​

নেফিসেন্ট সুলতান অব দ্য ইস্ট তার অনূদিত ইতিহাস গ্রন্থএছাড়াও তালিকায় রয়েছে বিখ্যাত লেখক এনিড ব্লাইটন এর শ্যাডো দ্য শিপ ডগতাছাড়া তার অনূদিত একই লেখকের রহস্য দ্বীপকিশোর উপন্যাসটিসহ বিশ্বসাহিত্যের বেশকিছু বিখ্যাত বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেসঙ্গত কারণেই তার কবিতা, অন্যান্য লেখা এবং অনুবাদকর্ম পাঠকমহলে বহুল সমাদৃত

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।