ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

উপন্যাস

নীল উড়াল: শেষ পর্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
নীল উড়াল: শেষ পর্ব নীল উড়াল

নায়ক ম্যাকগিল ভার্সিটির অধ্যাপক-লেখক-অভিবাসী বাংলাদেশি। ফরাসি সুন্দরী মার্গারেট সিমোনের প্রণোদনায় দেশে মাদকচক্র নিয়ে গবেষণাকালে ঘটনা মোড় নেয় রোমাঞ্চকর বাঁকে। আসে ধুরন্ধর বন্ধু-অসৎ ব্যবসায়ী এনামুল, সুন্দরী স্টাফ রোকসানা, মধুচক্রের জেনিফার-মলি-পরী, ক্লিনিকের অন্তরালের মিসেস খোন্দকার, রমনার শফি মামা ও ফুলি, ‘উড়াল যাত্রা’র সাইফুল, বিড়ালের কুতকুতে চোখের তরুণ সাংবাদিক ফরমানউল্লাহ এবং ছোটখালার রহস্যময় মেয়ে অন্তরা। প্রেম ও বেঁচে থাকার যুগল উড়ালে কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে।

৪১.
ছোটখালার বাসার উঠানের কোণে করমচা গাছের নীচে আমি আর অন্তরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারপাশে থোকা থোকা অন্ধকার।

আমরা কেউ কারও মুখ দেখতে পাচ্ছি না। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে অন্তরার গালে জলের মায়াবী ঝিলিক। দূরের জোনাকী-আলোর সঙ্গে মুক্তার মতো জ্বলে উঠছে অন্তরার অশ্রুবিন্দু। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। আমার স্পর্শে চমকে কেঁপে উঠে অন্তরা। বিদ্যুতের মতো সে চলে আসে আমার বুকে। আলিঙ্গনে মিশে যেতে চায় সে আমার শরীরে। ওর ঠোঁট পাগলের মতো চুমুকে চুমুকে আমাকে আকণ্ঠ পান করে। আমার সমস্ত অস্তিত্ব টলোমলো শ্যাওলার মতো প্লাবনমুখী। আমি নিজেকে সংযত করে বলি:
-তোর কিচ্ছু হয় নি অন্তরা। তোর কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

নীল উড়াল: পর্ব চল্লিশ

সে মনে হলো কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। করতলে মুখ মুছে মাথা ঝাঁকালো সে। আমি আবারও বলি:
-কেন এমন করছিস? নীল অন্ধকারে উদভ্রান্ত উড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিস?
অন্তরা মুখ নীচু করলো। মাটির দিকে তাকিয়ে বললো:
-আমার কিছুই ভালো লাগে না। আমার স্বপ্ন নেই, গান নেই, ঘুম নেই। আমার কিচ্ছু নেই।

অকস্মাৎ বাগানের অন্ধকার থেকে কেউ এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। অন্তরা ছিটকে পড়লো দূরে। আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে একটি ছুরির ফলা সাপের মতো আমাকে দংশন করছে। মাটিতে শরীর বিছিয়ে দেওয়ার আগে আমি আকাশে একটি প্লেনের চলে যাওয়া দেখতে পেলাম। ওই প্লেনে কি মার্গারেট আছে। আহা! সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে....।

অন্তরা স্বপ্নের মতো ভাবলো, ভাইয়া এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। সে ভাইয়ার কানে বিড় বিড় করে বলছে, যে দিন তোমাকে ঠিক ঠিক বুঝতে পারবো আর তখন তোমাকে যদি আবার আগের মতো একেলা পাই, তাহলে আমি ছাড়া তুমি আর কারও হতে পারবে না।

অন্তরা টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মনেই অন্ধকার থেকে আসা হন্তারককে বললো, আঙ্কেল, ভাইয়া ভীষণ লাকি! কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আমাকেও এখন ঘুম এনে দাও, গভীর ঘুম....।

সন্ধ্যামাখা করমচা গাছের তলে অতলান্ত ঘুমের অপেক্ষায় অন্তরা তখন নীল ছায়ামেঘ; দুঃস্বপ্ন-দিগন্তের শেষ কিনারে অস্থির-দিকভ্রান্ত উড়ালে উড়ালে ভাসমান....।   [সমাপ্ত]

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।