ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

উপেক্ষিত বাস্তবের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র | শিহাব ভূঁইয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
উপেক্ষিত বাস্তবের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র | শিহাব ভূঁইয়া উপেক্ষিত বাস্তবের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রথম গভীরভারে বুঝতে পারি, প্রথম জানতে পারি যখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ি। তার 'বিলাসী' গল্পের বিষয় ও ভাষা হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। যদিও আরও অনেক আগেই তার 'দেবদাস' উপন্যাসটি পড়েছিলাম। শরৎচন্দ্রের নারী চরিত্রের উপস্থাপন বরাবরই অন্য লেখকদের চেয়ে ভিন্ন মনে হয়েছে।

উপন্যাস যখন সামগ্রিক জীবনের কথা বলে আর নারী সেই জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই নারীকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রথম উপস্থাপন করেছেন শরৎচন্দ্র তার লেখায়। নারী জীবনের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, জীবনের ভেতর-বাহির সবটাই উঠে এসেছে তার লেখায়।

 

বাংলা সাহিত্যের এই অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্ম নেন। ১৯১৩ সালে ভারতী পত্রিকায় বড়দিদি উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে তার সাহিত্যিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার সাহিত্য রচনার মৌল প্রেরণা ছিলো জীবনপ্রেম ও মানবিক অনুভূতি।
 
তার রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হচ্ছে- বড়দিদি (১৯১৩), মেজদিদি (১৯১৫), পল্লীসমাজ (১৯১৬), শ্রীকান্ত (১ম পর্ব ১৯১৭, ২য় পর্ব ১৯১৮, ৩য় পর্ব ১৯২৭, ৪র্থ পর্ব ১৯৩৩), দেবদাস (১৯১৭), নিষ্কৃতি (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), দেনাপাওনা (১৯২৩), পথের দাবী (১৯২৫), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) প্রভৃতি।

বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক ও রোমান্টিক ধারা থেকে দূরে সরে গিয়ে শরৎচন্দ্র নিজস্ব স্টাইলে সমসাময়িক বাঙালি জীবনের উপেক্ষিত বাস্তব বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো একেবারে আমাদের নিজস্ব। ফলে পাঠক মনে তিনি খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তার উপন্যাসে প্রেমের বিচিত্র রূপ ও রহস্য উন্মোচিত করেছেন। এছাড়াও বাঙালি জীবনের পারিবারিক, সামাজিক জীবন ও তাদের সুখ-দুঃখ অত্যন্ত সার্থকভাবে উঠে এসেছে। শরৎচন্দ্র তার উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলোকে এঁকেছেন গভীর শ্রদ্ধা আর অতুলনীয় মমত্ববোধ দিয়ে। শরৎচন্দ্র একেবারে নিচুতলার নারীদেরও বড় করে তুলে ধরেছেন। 'চরিত্রহীন' উপন্যাসে কিরণময়ী, সাবিত্রী কিংবা 'বিলাসী' গল্পের নায়িকা বিলাসী উৎকৃষ্ট উদহারণ। সমাজের নানা শ্রেণীবৈষম্য, অনাচার, অত্যাচার, কুসংস্কার অতি বাস্তবতার সঙ্গে উঠে এসেছে।  

শরৎচন্দ্রের রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস মনে করা হয় 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসটিকে। এটি তার আত্মজৈবনিক উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিশোর চরিত্র আমার মতে শ্রীকান্ত উপন্যাসের 'ইন্দ্রনাথ'। ‘বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়’— এই বিখ্যাত উক্তিটি ছিলো শ্রীকান্ত উপন্যাসের প্রথম খণ্ডে বালক শ্রীকান্তের।  

বাংলা সাহিত্যে প্রেমের উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস'। এই উপন্যাসটির বহুবার চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। 'দেনাপাওনা' উপন্যাসে জমিদারের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ ও পারিবারিক জীবন বিধৃত হয়েছে। 'শেষ প্রশ্ন' উপন্যাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম রাজনৈতিক উপন্যাস 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্রের রচিত।

'মন্দির' গল্পটির জন্য ১৯০৩ সালে শরৎচন্দ্র কুন্তলীন পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও মহেশ, বিলাসী, অভাগীর স্বর্গ, বিন্দুর ছেলে প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প তার রচিত। প্রথমদিকে তিনি অনিলা দেবী ছদ্মনামেও লিখতেন।

এই অপরাজেয় কথাসাহিত্যক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে 'জগত্তারিণী' পদক ও ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী কথাশিল্পীর জীবনাবসান ঘটে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি কলকাতায়।

১৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিকের জন্মদিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বাংলা সাহিত্যে তিনি তার কীর্তির মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরকাল, এ কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।