ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা ‍| শতাব্দী জাহিদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
একগুচ্ছ কবিতা ‍| শতাব্দী জাহিদ একগুচ্ছ কবিতা

লিপিবদ্ধ রাত্রিজাগা

মধ্যবয়সে অর্ধরাতে মদের গ্লাস হাতে
দূরের হলুদ কুয়াশা চুপিসারে তীক্ষ্ণ বাতাস বাঁশি বেজে ওঠে—
তুমিও কি জেগে আছো পুরনো রাত্রি জাগার রীতিতে?
আমার মতো সবুজ মদের গ্লাসকে ভাবছো
অদ্ভুত শ্যাওলাপড়া মাটি।

বা শোবার ঘরে লজ্জাবতী আলোয় পড়ছো ফেলে আসা স্মৃতি।
নাকি আমার ভুল হয় সব—
তুই তোমার আপনার লিপিবদ্ধ খরস্রোতা জ্যামিতি।

শুটিং ফ্লোরে যদি চাঁদ সরে যায়, একা হই আমি।
লতাজাল সরিয়ে ডুব দেবো শৈশব কুঞ্জবনে।
মনে হবে, এখানেই পবো নিভৃত তোমাকে—
শূন্য আকাশ যেন থাকে তোমার দেয়ালে টাঙানো।
ঠান্ডা গলায় বলবো—যাবে, নৌকা বাঁধা ঘাটে?

তোমাকে মনে হলেই ভাবি, বারান্দার কামরাঙা মরিচের
গন্ধে রাত্রিঘুমে অজান্তে লিখছো চিঠি—
মেঘ, চুমু খেতে চাই
শরীর রক্তমেঘ আঁকে
লজ্জার লাবণ্য আজ ভিজে কচুরি ফুলের জলে।


আবিষ্কার

একটি পাখি বাঁধতে ছিল বাসা
ভুবনডাঙায় গাছটি কেমন একা
একটি নদী অদূর থেকে দেখা
আকাশ তখন মেঘে মেঘে ঢাকা।

দেহে ছোঁয়াই অধিক সবুজ ছাই
আগুন-মাটি-জল মিশেলে উড়াই
স্নেহদাগে মুছে যায় প্রেমিকার মুখ
অন্ধকারে হাতড়ে চলি চাঁদের চিবুক।

উৎক্ষিপ্ত ফুল চুম্বনে চুম্বনে জন্মায়
সিঁদুরের কৌটায় জমে পেঁচানো চুল
খলখল স্রোতে বর্ষাকে ডাকে চারুলতা
হৃদয়ে হৃদয়ে চিত্রিত ভালোবাসা।


অশরীরী মেঘ

ঘাম জমে জমে মেঘ হয়ে যায়
সান্ধ্য অন্ধকারে অন্ধকারে রাত হয়ে যায়
এখানে জন্ম-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে আকাশ—
তোমার রুপালি শরীরের নস্টালজিক বৃষ্টিতে ভেজে।
একগুচ্ছ জোনাকি হরিৎ আলোশূন্য রাস্তায়
ফেলে আসা চুলের গন্ধে প‍ুজো দেয়- সে অনেক দিন।

মেঘ, স্মৃতিরা কি বয়সের হিসেব কষে কষে মুছে গেছে?
নাকি গ্রীষ্মের সাদা রোদের মতো প্রজ্জ্বলিত এখনো তার আয়ু?
জানতে ইচ্ছে করে—

হাইওয়ের পথ ধরে দ্রুতি গাড়িতে ছুটে চলার সময়
ফসলের মাঠ, শান্ত-সবুজ নদী, সারি সারি গাছ, নীল আকাশ,
ছোট ছোট গ্রাম, দূরের মসজিদ, বৈদ্যুতিক কাকতাড়ুয়া, জরাজীর্ণ
চায়ের টং, বালিকার সাইকেল, শিশুর নোংড়া ন্যাংটা শরীর,
বেনামী পাখির ওড়াউড়ি, পাটের গন্ধ, মিইয়ে আসা রোদ্দুর, রথ
টানা গান...
এদের সঙ্গে বেগবান আরশিতে চোখ পড়ে তোমার এখনো?
জানতে ইচ্ছে করে...

তোমার শৈশবের পাহাড়ি উঁচু রাস্তা, স্বপ্নঘুমের টেডিবিয়ার,
বেলকনিতে কাপড় শুকানোর দড়ি, বরফের ভাঁজে আইসক্রিম,
কাচের চুড়ি, আমার স্কুলমাঠরঙের জামাগুলো, সত্য বলার
গোপন মিথ্যাগুলো, নাগরিক পূর্ণিমা দেখা, শহরের ভিড়ে মুখ
খুঁজে চোখ এঁকে দেখা, রোজা-নামাজ, প্রভাতফেরির কোরান,
জীবন ডিঙিয়ে জীবন-
এখনো জানতে ইচ্ছে করে...
ঘাম জমে জমে মেঘ হয়ে যায়
সন্ধ্যা অন্ধকারে অন্ধকারে রাত হয়ে যায়
অশরীরী মেঘ স্মৃতিতে স্মৃতিতে জল হয়ে যায়।


নক্ষত্রে সুপ্ত সূক্ষ্ম ক্ষত

দূরে বহুদূরে নক্ষত্রের বাড়ি
রোজ সকালে ফুল কুড়াতে আসি
নক্ষত্রের আলোর সাথে আড়ি
আমার সঙ্গে দেখা হবে না জানি
তবু আমরা ফুল কুড়াতে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad