ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অপ্রকাশিত রচনার যন্ত্রণায় সামদানী কোরায়শীর সন্তানরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
অপ্রকাশিত রচনার যন্ত্রণায় সামদানী কোরায়শীর সন্তানরা

ময়মনসিংহ: নাম গোলাম সামদানী কোরায়শী। মৃত্যুর দুই যুগেরও বেশি সময় পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন দেশের এ বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও অনুবাদক। সামদানী কোরায়শী পেশা জীবনে জনপ্রিয় অধ্যাপকও ছিলেন।

আপাদমস্তক মানবতাবাদী ও মুক্তচিন্তার অধিকারী এ মানুষটিকে সাহিত্য বিভাগে এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেরিতে হলেও তার এই স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। তবে এমন আনন্দের সময়েও প্রয়াত এ অধ্যাপকের অনেক রচনাবলী আজও প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণায় ভুগছেন সন্তানরা।

লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য, মহুয়া, মলুয়া আর চন্দ্রাবতীর আখ্যানভূমি ময়মনসিংহ। সাহিত্যচর্চায় সমৃদ্ধ এ জেলা। এখানকার কীর্তিমান কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন প্রয়াত সাহিত্যিক অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী। তার সন্তানরাও হেঁটেছেন বাবার অনুসরণে। ময়মনসিংহের একমাত্র সাহিত্য সংগঠন ‘সাহিত্য সংসদের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামদানী কোরায়শীর সন্তান কবি ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল। আরেক সন্তান সজল কোরায়শীর প্রয়াসে জেলায় টিকে আছে আবৃত্তিচর্চা।

মুক্ত বিশ্বকোষ উকিপিডিয়া বলছে, বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ছিল অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শীর। রেখে গেছেন বিশাল সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রচনার পাশাপাশি অনুবাদ ও সম্পাদনার পরিমাণও বিশাল।

১৯৬১ সালে ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্পে বাংলা একাডেমির কাজে তার সহযোগী হন অধ্যাপক কোরায়শী।

এ অভিধান প্রকল্পের পাশাপাশি তিনি অনুবাদকর্মেও মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি বিভিন্ন ভাষার বহু মৌলিক গ্রন্থ অনুবাদ করেন তিনি।

তার অনুবাদিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে, কালিলা ও দিমনা, আইন-আদালতের ভাষা আরবি-ফার্সি শব্দ (মূল ইংরেজি), অশাস্ত্রীয় পুরাণ (মূল সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়), শব্দাদর্শ অধ্যয়ন (মূল মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ), তারিখ-ই-ফিরোজশাহী, তোহফা (মূল ফার্সি) প্রভৃতি।

এরকম বহু অনুবাদ ও সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে অনন্য নিদর্শন রেখে গেছেন তিনি।

১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন অধ্যাপক কোরায়শী। ওই সময় তার সহকর্মী ছিলেন দেশখ্যাত প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। এ সময়টাতে তাদের দু’জনকে ডাকা হতো ‘মনিকাঞ্চন’ হিসেবে।

জীবদ্দশায় অধ্যাপক কোরায়শী পেয়েছেন কুমারদী মাদ্রাসা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫০), এম. এ. কামিল পরীয় স্বর্ণপদক (১৯৫৪), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭) ও অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)।

ময়মনসিংহের প্রতিটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছে গোলাম সামদানী কোরায়শীর নাম। যতীন সরকার, খগেশ কিরণ তালুকদারদের সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেন ‘মুক্তবাতায়ন পাঠচক্র’।

মৃত্যুর পর প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় পর প্রয়াত এ অধ্যাপকের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের (মরণোত্তর) গৌরব।

গোলাম সামদানী কোরায়শীর সন্তান ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি ইয়াজদানী কোরায়াশী কাজল বলেন, বাবা নেই আজ দুই যুগেরও বেশি। অনেক বঞ্চনা হতাশার মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের এ উপলক্ষটি অসাধারণ হয়ে এসেছে। তবে বাবার লেখা আরও বেশি-বেশি প্রকাশ করতে হবে।

গোলাম সামদানী কোরায়শীর রচনাসমগ্র প্রকাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের জন্য তিনি দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
এমএএএম/ওএইচ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।