ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৯)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৯) কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা

[পূর্বপ্রকাশের পর]
তবে চাইলেই তো আর অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং অস্ত্র পরিচালনার ট্রেনিং নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন অর্থ, অস্ত্র সহযোগিতা। কসোভোকে এসব জোগান দিলো কে বা কারা? কসোভো যুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদ দেখে অনেকেরই হয়তো ধারণা হয়েছে এ অঞ্চলে সার্ববাহিনীর গণহত্যা, নিপীড়ন বা শক্তি প্রয়োগের একটা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবেই হুট করে এই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছে।

বস্তুত আমেরিকা, ন্যাটো ও জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা তলে তলে কসোভোর বিদ্রোহীদের অস্ত্র, ট্রেনিং ও অর্থ সহযোগিতা দিয়ে এমন একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার তালিম দিয়ে যাচ্ছিলো সেই নব্বই-এর দশকের শুরু থেকেই। ওদিকে ৯৭ সালে আলবেনিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সেখানে লুট হওয়া আর্মি ব্যারাকের অস্ত্রের চালানের একটি বড় অংশও ঢুকে যায় কসোভোতে।

শুধু তাই নয়, গোটা ইউরোপে আলবেনিয়ান মাফিয়াদের ড্রাগ আর অবৈধ অস্ত্র বিক্রির টাকার একটি বড় অংশ ঢালা হয় এই কসোভো সংগ্রামে। বলাই বাহুল্য, এ সবই ঘটে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। কিন্তু প্রশ্ন হলো পশ্চিমা শক্তিগুলোর কী স্বার্থ ছিল এর পেছনে? অনেকে বলেন কসোভোয় আছে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লার খনি, সেটি একটি কারণ হতে পারে। সে যুক্তি অগ্রাহ্য করে অনেকে বলেন কসোভোয় কয়লার বিশাল খনি আছে বটে, তবে সে কয়লা মানসম্মত নয়। যদিও শুধু কয়লাই নয়, আরও বেশ কিছু খনিজ সম্পদের খনিতে সমৃদ্ধ এই কসোভো।

তাই এই যুক্তিটি একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। অথবা আমি যদি এ যুক্তিকে পরিত্যাগও করি তাহলেও বলতে হয় আরও কিছু দৃশ্যমান কারণ ছিল এ ব্যাপারে আমেরিকার নাক গলাবার পেছনে, যুদ্ধপরবর্তী কসোভোর দিকে তাকালেই সেটি আঁচ করা যায়। কসোভোয় এখন যে মার্কিন ঘাঁটি সেটি ইউরোপে জার্মানির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন উপস্থিতি, যেখান থেকে পুরো দক্ষিণ বলকানে মার্কিন নজরদারি সম্ভব। শুধু তাই নয়, সেসময়ে এই বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া। তাই সে দেশটিকে যত বেশি ভাগ করে দুর্বল করা যায় ততই তা মার্কিন স্বার্থের জন্যে অনুকূল হয়, এটিও হয়তো একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।

কসোভোআর মিলেশভিচের মতো উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা যুগোস্লাভিয়ার ক্ষমতায় থাকায় মার্কিন আশা ও পরিকল্পনা পূরণ বরং বেশ কিছুটা সহজ হয়ে যায়। মিলেশভিচকে কসোভোয় সংঘটিত গণহত্যা এবং ব্যর্থতা জন্য দায়ী করলেও অনেক সার্ব কসোভোর বিচ্ছেদকে এখনও মেনে নিতে পারেন না। এনিয়ে যে ক'জন সার্বের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা সবাই বেশ আক্ষেপের সুরে বলেছে ওই ভূমি আমাদের, ওখান থেকে আমাদের স্রেফ তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কসোভোয় শেষ অবধি সার্ব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মূল জনসংখ্যার পনের-বিশ শতাংশ হলেও সার্বদের অর্থোডক্স ধারার বেশ কিছু জাগ্রত মঠ ছিলো (যার অধিকাংশই যুদ্ধের সময়ে আলবেনীয়দের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) এই কসোভো অঞ্চলে, এটিও সার্বদের অন্তর্জ্বালার একটি কারণ।

কসোভোতবে কসোভো আজ সার্বিয়ার সঙ্গে একই পতাকাতলে থাকলে কসোভোর আলবেনীয়রা সার্বদের সমমর্যাদা বা অধিকার পেত কি না সেটিও কিন্তু এক বিশাল প্রশ্নের ব্যাপার। বস্তুত কোনো একাধিক জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্রে যখন প্রকৃষ্টরূপে বহুত্ববাদিতার চর্চা হয় না, তখনই সে রাষ্ট্রের মূল কাঠামোতে ক্ষয়রোগ বাসা বাঁধে, যে রোগ একদিন টেনে আনে অনিবার্য বিপর্যয়কে।

মার্কিন আনুকূল্য পাওয়ার কারণেই হয়তো কেএলএ পরবর্তীতে বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে যায়, যেমন হত্যা, গুম, অপহরণ, ইত্যাদি। কসোভো যুদ্ধে সার্ববাহিনী যেমন অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়েছে তেমনি জড়িয়েছে এই কসোভো গেরিলাবাহিনীও। যুদ্ধের পর এই গেরিলাবাহিনীর উগ্রবাদী অংশ থেকে লিবারেল অংশটিকে আলাদা করে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীমকে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছিলো।

** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৭)
** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৬)
** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৫)
** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৪)
** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৩)

** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-২)
** কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।