একটা সময় ছিল এ বাংলায় ষড়ঋতুর পরিক্রমায় বছরজুড়েই ছড়িয়ে থাকত নানা উৎসবের রঙ, নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকতো অসংখ্য উপকরণ। কেমন ছিল সেই রঙ, সেই উপকরণ? তারই অনুসন্ধান করেছেন আবু রেজা তার ‘আমাদের লোকঐতিহ্য’ বইটিতে।
‘আয়রে আয় পোলাপান/কাইন্দা কাইন্দা পয়সা আন/বায়স্কোপ তোরা দেখবি আয়/চইলা গেলে ফুরাইয়া যায়’- ছোট্ট এই ছড়া দিয়ে ‘বাংলার লোকঐতিহ্য’ বইটি শুরু করেছেন লোক ঐতিহ্য সন্ধানী লেখক আবু রেজা। এই ছড়ার পর পরই তিনি আমাদের জানাতে শুরু করেন বাংলার ঐতিহ্যের সাথে এক সময় কিভাবে জড়িত ছিল লোকমনে বায়স্কোপের নেশা। আমরা জানতে পারি কিভাবে একটা সময়ে সুরে সুরে বায়স্কোপের মাধ্যমে বিভিন্ন লোককাহিনী ছাড়াও ঐতিহাসিক ঘটনা, স্থান, ব্যক্তি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছবি ও গান পরিবেশন করা হতো মানুষের সামনে।
বইটি পাঠ করলে স্পষ্টই টের পাওয়া যায় এই বাংলা ঐতিহ্যের এমনই এক স্বর্গভূমি যেখানে ধান ভানার শব্দে অঘ্রানের নবান্ন উৎসব আগমনী বার্তার ধ্বনি তোলে। বাঙালির বাংলা সন যেমন ফসলি সন, তেমনি তাদের জীবনেও রয়েছে ফসলের মৌসুমের উচ্ছলতা। আছে পিঠা-পুলি খাওয়া, নানা রকম মেলার আয়োজন, যাত্রা, জারি-সারি, গম্ভীরা কীর্তন, পালার আসর, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হাডুডু খেলা, পুতুল নাচ, সার্কাস, জমজমাট আনন্দ-ফূর্তি।
আশি পৃষ্ঠার এই বইটিতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মোট ১৫টি বিষয় নিয়ে ঝরঝরে গদ্যে আলোচনা করা হয়েছে। বায়স্কোপের পর আবু রেজা আমাদের সামনে একে একে তুলে ধরেন খড়ম, হুঁকা, পালকি, টমটম, ঢেঁকি, গরুর গাড়ি, শীতল পাটি, হাতপাখা, গামছা, ঘুড়ি, নৌকাবাইচ, নতুন ধানের নবান্ন উৎসব, বিভিন্ন মেলা, বৈশাখে হালখাতা প্রসঙ্গ।
‘আমাদের লোকঐতিহ্য’ বইটি প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। প্রচ্ছদ এঁকেছেন জাহিদ হাসান বেনু। দাম ১২৫ টাকা।
বাংলাদেশ সময় ১৫৩৫, মার্চ ১৪, ২০১১