ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আবার ১১ মাসের ছুটি

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১১
আবার ১১ মাসের ছুটি

ঢাকা: ১১ মাসের ছুটি। মঙ্গলবার থেকে।

২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি যে মিলনমেলায় মেতেছিল বাঙালি, তার ইতি টানা হলো সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি। আবার ঠিক ১১ মাস পর ১ ফেব্র“য়ারি শুরু হবে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১২’। আর সেই দিনের প্রতীায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে আবারও দীর্ঘ ছুটি।

বাংলা একাডেমীর তথ্যমতে, এবারের বইমেলায় মোট তিন হাজারেরও বেশি বই এসেছে। বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকার বই। আর মাসজুড়ে মেলায় এসেছেন প্রায় অর্ধকোটি ক্রেতা-দর্শক।

সোমবার শেষ দিনে তাই ভিড় হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। হয়েছেও তা-ই। এ দিনের প্রচুর সমাগম একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককে। আবার কেউ কেউ বললেন, ‘ওই দিনের মতোই ভিড় হলো শেষ দিন। ’

ছুটি সাধারণ আনন্দের ব্যাপার হলেও বইমেলার ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো। শেষ দিন বলে বিষন্নই দেখালো অনেক লেখক-পাঠককে। প্রকাশকদেরও। সবার একটা আক্ষেপ- আবার এক বছরের অপেক্ষা। বইমেলাকে ঘিরে প্রাণের যে উচ্ছ্বলতা, যে আবেগ, বাস্তবতা তা মেনে নিয়ে আপাতত এখানেই ‘স্থগিত’ করে দিতে হবে।

তবে, মেলা শেষ হলেও আরও কিছুদিন এর রেশ থেকে যাবে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। আয়োজনের সার্থকতা আর সাফল্য-ব্যর্থতার আলোচনায় মুখর থাকবেন বাংলা একাডেমীর কর্তাব্যক্তিরা। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করতে করতে ক’টি দিন কাটাবেন অংশ নেওয়া সব প্রকাশক। মেলায় এসে পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের স্মৃতি বুকে নিয়ে আবার আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন লেখকরা। আর পাঠকরা বসে বসে ভাববেন- মেলা থেকে প্রয়োজনীয় সব বই কেনা হলো তো?

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমী প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে আয়োজন করে থাকে এ ‘অমর একুশে বইমেলা’। আর এ মেলাটি হয়ে ওঠে বইপ্রেমী মানুষের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের অংশগ্রহণে পরিণত হয় জ্ঞান-বিনোদনের মেলায়।

একাডেমী পরিচালক ও এবারের অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন বলেন, ‘ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি কিছু থাকলেও বেশ ভালোভাবেই মেলা চলেছে। অন্যান্যবারের চেয়ে এবার মেলা আরও বেশি সুশৃঙ্খল আনন্দমুখর ও প্রাণবন্ত ছিল। গণমাধ্যমও বেশ প্রশংসা করেছে এবারকার মেলা নিয়ে। ’

শাহিদা খাতুন জানান, আগামী বছর নতুন আঙ্গিকে হবে মেলা। বাংলা একাডেমীকে সম্পৃক্ত রেখেই সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে মেলা আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ নিয়ে একাধিক সভা হয়েছে। আগামী এপ্রিলে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে থেকে সিদ্ধান্ত আসবে আগামী বছরের মেলা কী রকম হবে।

মেলার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, ‘সার্বিকভাবে ভালো হয়েছে। তবে ভালো বই কম এসেছে। বইমেলায় প্রকাশকদের কাছে পাঠকদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। তাই বিকলাঙ্গ, অর্ধাঙ্গ বই জন্ম না দিয়ে ভালো, মানসম্পন্ন, মানুষের মনকে নাড়া দেয়, আলোড়িত করে এমন বই-ই বের করতে হবে। অথচ এবারের মেলায় সে ধরনের ভালো বই পর্যাপ্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে পাঠকরা নেট, পাইরেটেড ইত্যাদি আজেবাজে বই কিনে প্রতারিত হয়েছেন। ’

মেলায় প্রায় প্রতিদিন আসা জনপ্রিয় ছড়াকার লুৎফুর ররহমান রিটন অবশ্য বই কেনাবেচার তুলনায় একুশোর চেতনাকেই প্রাধান্য দিলেন।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এখানে বই কেনাবেচাকে আমি মূখ্য মনে করি না। বিক্রির পরিবর্তে চেতনাগত দিকটা কতদূর প্রসারিত হয়েছে দেখতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘এ বইমেলাকে ঘিরে একটা জাগরণের সৃষ্টি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও দেশের বাইরে থেকে বইপ্রেমী বাঙালি ও লেখকরা আসেন। অভিভাবকরা আসেন শিশুদের নিয়ে। সবাই হয়তো বই কেনেন না, দরকারও নেই। ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এ মেলায় এসে সবাই সেই শহীদদের প্রতিই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন। তরুণ প্রজন্ম নতুন করে উপলব্ধি করতে শেখে- তারা একটি গর্বিত উত্তরাধিকার। একুশ ও স্বাধীনতার চেতনায় শানিত হয় তারা। ’

শেষ দিনের পড়ন্ত বেলায় মেলায় আসা জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মতে, বইমেলা এখন শুধু বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন আমাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাণের টানেই সবাই আসে।

‘মেলার সাফল্য নিয়ে আমরা অভিভূত’ বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সমাপনী দিনে বললেন, ‘সবার সহযোগিতায়ই এমন সফল সমাপ্তি ঘটেছে। আগামীতে আরও সফল ও আকর্ষণীয় করতে সব মহলের পরামর্শ নেওয়া হবে। ’

এদিকে, বইমেলার শেষ দিনে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন, হাসান ইমাম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাশেদ খান মেননসহ সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিক্ষকসহ অসংখ্য গুণীজনের সমাগম ঘটে। উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যেও তাদের বিভিন্ন স্টল ঘুরে বই কিনতে দেখা যায়।

নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন

সোমবার, শেষ দিন হলেও বইমেলায় নতুন ৮৯টি বই এসেছে। এ নিয়ে এবারের মেলার মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ১৩। এর মধ্যে সর্বাধিক ৬৯৯টি কবিতার বই এসেছে। শেষ দিনেও মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ২৪টি বইয়ের।

সমাপনী অনুষ্ঠান
বিকালে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন।

একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ব্যাংকের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ ও স্টেপ মিডিয়ার পরিচালক মোস্তফা জাহিদ খান। অনুষ্ঠানে মেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন।

মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করায় ব্র্যাক ব্যাংক ও স্টেপ মিডিয়াকে বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া, প্রকাশিত বইগুলো পর্যালোচনা করে আগামী পহেলা বৈশাখ সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ ও সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্পন্ন বই প্রকাশের জন্য ‘মুনীর চৌধুরী’ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।