ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বাংলা একাডেমী থেকে বইমেলাকে সরাতে হবে : নির্মলেন্দু গুণ

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১
বাংলা একাডেমী থেকে বইমেলাকে সরাতে হবে :  নির্মলেন্দু গুণ

প্রথম কয়েক দিন আমি মেলায় যাইনি। এখন মেলায় প্রতিদিন ৮টার পরে যাই, ঘণ্টাখানেক থাকি।

কয়েক বছর ধরেই মনে হচ্ছে এ বইমেলা বাংলা একাডেমীতে হওয়া উচিত নয়। বাংলা একাডেমীর জায়গা ছোট, লোকজনের ভিড়, যে কারণে ৮টার পরে আমি মেলায় যাই। আগে গেলে হাঁটাচলা করা বা বসা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রেতার চেয়ে দর্শকের সংখ্যাই এখানে বেশি। সব সময় মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

ঢাকার শহরে লোক এখন এক কোটির বেশি। অথচ এ মেলা যখন প্রথম শুরু হয় তখন এখানে লোক ছিল ২৫ লাখ। পাঠক-প্রকাশক-লেখক ও মিডিয়া সবই বেড়েছে। একই প্রাঙ্গণে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।

আসলে যে ভিড় হয় তা বইমেলার চরিত্র প্রকাশ করতে পারছে না। মোড়ক উন্মোচন বাংলা একাডেমীতে হতে পারে। আমার মনে হয় ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন যেখানে হয়, সেখানে এই মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। জায়গা কম বলে পথের পাশে রাস্তায় স্টল বসে। এভাবে জায়গা আটকে মেলা করা তো ঠিক নয়। আমার তো মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মাঠ সেখানে মেলা হলে ভালো হয়।

এখন আমাদের এখানে মেলার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলা একাডেমী, অথচ বইমেলার শুরু হয়েছিল প্রকাশকদের হাত দিয়ে। পরে আশির দশকে বাংলা একাডেমী এ মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয় এবং নানা প্রচারমাধ্যমে মেলাটাকে জনপ্রিয় করেছে। তবে আমার মনে হয়েছে বাংলা একাডেমী মেলার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বইমেলা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কেননা বইমেলা করার জন্য বাংলা একাডেমীকে কেউ বলেনি। তারা একুশের আবেগকে পুঁজি করে মেলাকে তাদের তত্ত্বাবধানে রাখতে চায়।

মনে হয় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং প্রকাশকরা মিলে বইমেলার আয়োজন করা হবে সঠিক কাজ। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের জন্মই বইকে প্রোমোট করার জন্য, অপরদিকে বাংলা একাডেমীর কাজ ভিন্ন।   বইমেলার আয়োজন করায় একাডেমী যেমন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বইমেলাও।

বাংলা একাডেমীর নীতিমালা বা কর্মকা-ের সাথে এটা যায় না। মেলায় স্টল ও বই বাড়ছে কিন্তু কমে যাচ্ছে জায়গা। আমার মনে হয়, বাংলা একাডেমীকে বাণিজ্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে।

আরেকটা কথা, মেলায় বিষয়ভিত্তিক যে সেমিনারগুলো হয়, তা মেলা উপলক্ষে করার তো দরকার নেই, বাংলা একাডেমী এমনিতেই এটা করতে পারে। আমার কথা হলো, যারা বই কিনতে যায় তারা বই-ই কিনবে, আবার যারা গান শুনতে যায় বা বক্তৃতা শুনতে যায় তারা কেবল গান আর বক্তৃতাই শুনবে। বই কিনতে গিয়ে তো ওইগুলি শোনার দরকার নেই। আমি আগেও অনেকবার বলেছি, এখনো বলছিÑ বাংলা একাডেমী থেকে বইমেলাকে সরাতে হবে।

বইমেলায় নির্মলেন্দু গুণের বই

এবারের মেলায় বিভাস থেকে বের হচ্ছে আমার ‘প্রবন্ধগুচ্ছ’, কাকলী থেকে ‘কাব্যসমগ্র তৃতীয় খ-’।
অবশ্য আমার ‘কাব্যসমগ্র চতুর্থ খ-’ বের হয়েছিল গত বছরই অন্য প্রকাশনী থেকে। তৃতীয় খ-টা গত মেলাতেই আসার কথা ছিল কিন্তু প্রকাশক আনতে পারেননি।
 
বের হচ্ছে সন্ধানী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’, গদ্যপদ্য থেকে ‘অগ্রন্থিত জার্নাল’, প্রীতম থেকে কিশোর উপন্যাস ‘কালো মেঘের ভেলা’ ও বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে লেখা কলামের বই ‘কবির কলামে বিশ্বকাপ’।  
এছাড়া  বেশ কয়েকটি পুরোনো বই রিপ্রিন্ট হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে অনার্য থেকে উপন্যাস ‘দেশান্তর’, কবিতার বই ‘অনন্ত বরফবীথি’ ও পাঞ্জেরী থেকে ‘১০০ রাজনৈতিক কবিতা’।


বাংলাদেশ সময় ১২১৫, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।