ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

গৌতম চৌধুরীর কবিতা । তুমি আর আমি

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪
গৌতম চৌধুরীর কবিতা । তুমি আর আমি অলঙ্করণ: সব্যসাচী হাজরা

নীরবতা কোনওদিন ভাঙতে নাই
শপথ করিয়েছিলে তুমি
তোমার তো জীবনে কোনও ভূতপেত্নির উপদ্রব নেই
আমার আছে
কী ক’রে কথা রাখবো আমি
নিদেনপক্ষে পুকুরের পাড়ে গিয়ে দেখেছি
জলপোকাদের আলতো লাফালাফি
কচু পাতার উপর ফুরফুর ক’রে ডানা কাঁপানো ফড়িং
এদের কাছে ফিসফিস ক’রে বলেও ফেলেছি দু’চার কথা
কী হবে, এরা কি কেউ চেনে নাকি তোমাকে
ধরতে পারো, একরকম গোপনই আছে সব
একটুখানি মিথ্যা মেশানো সত্যের মতো— এই যা!

২.
কথার স্বভাবই এই, তারা কখনও একলা আসে না
তুমি হয়তো বলবে, একটা প্রাথমিকতা ঠিক করার কথা
যেমন আজ অনেক দিন পর লালচে একখণ্ড চাঁদ দেখতে পেয়েছো
কিন্তু, উলটো দিকের জানালা দিয়ে ভেসে আসা দৃশ্যাবলী
সেসবেরও তো উল্লেখ থাকা দরকার, না কি?
দরকার মানে, বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল, ভেবো না আবার
কেন যে এত বোঝানোর চেষ্টা
নীরবে নিভৃতে কাঁদে জেনেও তবুকেন যে
শত শত ওকালতনামা
আরবি ফারসি ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে কত কত দরখাস্ত
কত সওয়াল কত জবাব
কত ফাঁসির হুকুম আর ফাঁসির বিরুদ্ধে কত মিছিল

৩.
প্রতি পাঁচ কিলোমিটার অন্তর যদি পালটে যায় ভাষা
প্রতি পাঁচ দিন অন্তর একটা মানুষও কি
পালটে যেতে পারে না কিছুটা— বলেছিলে তুমি
তুমি আমাকে যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হাজির হবো—
এতদূর স্বাধীনতা কি আছে নাকি আমার
তবু, ঘুমের ভিতরেও আমি চলি
পাঁচদিনে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার
দেখি, ফুলচাষ করবে বলে একদল লোক মাটি কুপিয়ে চলেছে
আহা, সত্যিই যদি তাই হতো
ল্যান্ডমাইন বিছানো হচ্ছে সারি সারি
সকলেই বলছে— বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক
সকলেই বলছে— সবার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক
তোমার কাছে কিছুই চাওয়ার জো নেই আমার
মনে হচ্ছে, এবার ভাষাশিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে

৪.
নেশা না জাগলে কি হাঁটার রাস্তা উড়ে পার হওয়া যায়
না-উড়তে পারলে তোমার নাগালই বা পাই কী ক’রে
কিন্তু, নেশা আর থাকে কতক্ষণ, কেবলই টুটে ফুটে যায়
অথচ, কেউ আমাকে দেখে কিচ্ছুটি টের পায় না
এই যে মরে হেজে শহরের রাস্তা দিয়ে চলেফিরে বেড়াচ্ছি
মাস্তানি করছি, তোলা আদায় করছি
কেউ বলছে না— উঁহ্‌, কী দুর্গন্ধ
একটা মানচিত্র রেখে দিইনি বলে আজ আফশোস করি
মরুভূমির উপর কোথায় যে সেই তাঁবু
কোথায় সেই অস্তমিত পানশালা

৫.
পথ অত্যন্ত সামান্য
শকটও ছুটেছে তার নিজস্ব গতিতে
যদি খাদের ভিতর শেষবারের মতো গড়িয়ে পড়ার আগে
একবার জানতে চাই আত্মপরিচয়
তুমি কি একবার বুক থেকে সরিয়ে নেবে না আঁচল
উল্কির দাগের ভিতর থেকে কথা বলে উঠবে
গৃহযুদ্ধে পুড়ে যাওয়া একটি অজানা মহাদেশ
দেখা যাবে, গভীর শৈশবেই আমার মৃত্যু হয়েছিল
এতদিন যা বহন করে এনেছি
তা একটি সাদা পতাকা
দয়া ক’রে সেটিকে তুমি মাথার উপরে টাঙিয়ে দাও

৬.
মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে অস্পৃশ্য ক’রে দিয়েছি বলে
তুমি কেবলই স্নান ক’রে চলেছো
সেই অনর্গল জলের ধারায় একটা ছায়াপথ ফুটে উঠছে আকাশে
মৃদু আলো ছড়িয়ে পড়ছে পউষের ফাঁকা মাঠে
প্রান্তরের শূন্যতার চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হলো ওই আলো
দিগ্বিদিকহীন, একাকী, নির্জন এই বিশালতার মধ্যে
যা স্পষ্ট ক’রে তুলছে আমার অসহায়তা
যেন, উলটানো কাচের পাত্রে ধরে রাখা একটি ক্ষুদ্র প্রাণী
যে বুঝতে পারছে, বৈজ্ঞানিকের মতো তুমি তার দিকে চেয়ে আছো
গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রাশি রাশি স্নানান্তিক জল

৭.
কখনই গোটা প্রক্রিয়াটাকে গুরুত্বের সাথে নিলাম না
এই হলো তোমার কথার সারমর্ম
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে
যে-ধোঁয়া-ওঠা ভাপাপিঠা বানানো হয়েছিল
ভাবি, তার সৌন্দর্যটুকুর পিছনে
কত রকম পরিশ্রম আর কত কারসাজিই না ছিল
কে জানতো, ধারাবাহিক রক্তপাতের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে
দিগন্ত জুড়ে কুমিরের চামড়ার মতো দাগড়া দাগড়া হয়ে ফুটে উঠবে
পক্ষ-বিপক্ষ বেছে নেবার কথা
খুব বিশ্রী একটা উপমা দিলে, বিশ্রী আর নড়বড়ে—
ব’লে, নিজের কথায়ফিরতে চাইলে তুমি
বলো, আমি তো শুনতেই চাই

৮.
আবার এসে পড়লাম কর্ণের রথের সামনে
উফ্‌, বেচারার চাকা বসে গেছে কাদায়
কিছুতেই টেনে তুলতে পারছে না
এই অপরাধ কার?
তুমি বললে, কতটুকুই বা আর আমরা দেখতে পাই
খুব শক্তিশালী কাচ লাগিয়েও, কতটুকু?
তার মানে! তুমি কি নিয়তির কথা বলছো নাকি
ভবিতব্যের কথা?
কী, কাহিনী নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছি কেন
তা ঠিক, কাহিনী। তবু, মহাকাব্য তো!
কিন্তু, মহাকাব্যও তো মানুষেরই রচনা, না কি?
বলেই, অদৃশ্য হলে তুমি








গৌতম চৌধুরী: বাংলা ভাষার ভারতীয় কবি

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।