ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

সানন্দে-স্বাচ্ছন্দে প্রাণের সমাহার

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪
সানন্দে-স্বাচ্ছন্দে প্রাণের সমাহার

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: সারা দিনটাই মুখ গোমড়া করে ছিল আকাশটা। সূর্যকে উঁকি দিতে দেয়নি একদম।

এ সুযোগে বেহায়া শীতের বাড়াবাড়ি। তাতে বিরক্তি নেই কারো মাঝে। কিছুটা হয়তো জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হয়েছে, তাতে কি?
 
দিন-ক্ষণ-মাসের হিসেবে তিন দিন আগে শীতের মাস মাঘের বিদায় হয়েছে। নাছোড়বান্দা শীত তারপরও যেন যেতে চাইছে না প্রকৃতি ছেড়ে। সারাদিনটাই সূর্যের অনুপস্থিতিতে ছড়ি ঘুরিয়েছে নাছোড়বান্দা শীত। আর এমন আবহাওয়ায় বইপ্রেমীরাও বেশ মজাই পেয়েছেন।
 
যারা গত দুই দিনের স্নিগ্ধতা, মুগ্ধতা নিয়ে গ্রন্থমেলায় এসেছেন এক কাপড়ে, বিকেলে তারা শীতের বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছেন কিছুটা। তবে সন্ধ্যায় তার তীব্রতা বাড়লেও তাতে কারো কিছু যায়-আসেনি।
 
শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ছিল ১৫তম দিন। গত দুই দিন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস কাটিয়ে এদিনও মেলায় ছিল চাঙ্গাভাব। মেলায় বইপ্রেমীরা যেমন সাচ্ছন্দে বই কিনেছেন, তেমনি বই বিক্রিও ছিল নির্ঝঞ্জাট।  
 
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর হওয়ায় অভিভাবকদের অনেকেই সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন সকালেই। রাজধানীর অনেক স্কুল, মাদ্রাসা থেকে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে দলবেঁধে এসেছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও। মেলায় ঢুকে সে কি তাদের হৈ-হুল্লোড়! তাই গত দু’দিনের চেয়ে শনিবার মেলা কম জমেছে, তা বলা যাবে না কিছুতেই।
 
বরং অনেক বেশি সানন্দে-স্বাচ্ছন্দ্যে শেষ হয়েছে মেলার মেলার ১৫তম দিনটি।
 
শনিবার মেলায় ১২৬ বই

১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিন। মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১২৬টি। এর মধ্যে ১৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
 
এদিন মেলায় আসা নতুন বইয়ের মধ্যে, গল্প-১৯টি, উপন্যাস-১৯টি, প্রবন্ধ-১৫টি, কবিতা-৩৭টি, গবেষণা ধর্মী-২টি, ছড়া-২টি, শিশুতোষ-৩টি, জীবনী-৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক-২টি, নাটক-৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক-২টি, ইতিহাস-১টি, চিকিৎসা-৩টি, রম্য/ধাঁধা-২টি, ধর্মীয়-১টি, সায়েন্স ফিকশন-২টি এবং অন্যান্য-১০টি।
 
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গ্রন্থমেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৮০টি নতুন বই এসেছে।
 
মূল মঞ্চের আয়োজন

শনিবার মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দে বই কেনার সুবিধার্থে সকাল ১০টা থেকে থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে শিশুপ্রহর। এছাড়া অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে মেলার মূল মঞ্চে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন।
 
বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘লালন শাহ্’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ‘লালন সাঁই-এর দেহতত্ত্ব’  শিরোনামের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের বিশিষ্ট লালন গবেষক শক্তিনাথ ঝাঁ। আলোচনায় অংশ নেন, শফি আহমেদ, আবদুল ওয়াহাব, অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রেজাউদ্দিন স্টালিন। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার।
  
আরোচনা অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক বলেন, লালন সাঁই দেহতত্ত্বের আধারে মূলত সহজানন্দের সাধনা করেছেন। সহজ সাধনাকে লোকধর্মের সর্বত্র চিহ্নিত করা যায়। লালনও সহজ সাধনার কথা বলেছেন। সহজাত মানব প্রবৃত্তিগুলো পূর্ণভাবে তুষ্ট করার সুকঠিন সাধনা ছিল এটি। এ সাধনা দেহ মনে আনন্দের উৎস। যা শেষতক বৃহত্তর মানবমঙ্গলের দ্বার খুলে দেয়।
 
আলোচকরা আরও বলেন, লালন সাঁই ভাব সাধনার রূপকে ইহজাগতিক মুক্তির কথা বলেছেন। ক্ষণিকের প্রতীকে তিনি অনন্তের গান গেয়েছেন। লালন বিশ্বাস করতেন, মহাত্যাগ ছাড়া মহামোক্ষ লাভ অসম্ভব। লালনের দেহতত্ত্বে আমরা দেখি, তিনি সর্বদেহে মানব মঙ্গলের সূত্রসন্ধান করেছে। নিম্নবর্গের ভাবলোক নানান গভীর বাণীতে ভাস্বর লালনের চিন্তা ও সৃষ্টিতে। যা সুদীর্ঘ সময় পেরিয়ে আজও আমাদের কাছে সমান প্রাসঙ্গিক।
 
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, লালন সাঁই  বাংলা অঞ্চলের ভাবরসকে বৃহত্তর মাত্রায় উন্নীত করেছেন। তার দেহতত্ত্বও একই সূত্রে আলোচনাসাপেক্ষ। লালনের দেহতত্ত্ব সংকীর্ণ শারীরবৃত্তিক পরিসর ছাপিয়ে বৃহতের বার্তা দেয় যা জাতি-সম্প্রদায়-ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের কথা বলে।
 
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী শুভেন্দু মাইতি। এছাড়া ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’।
 
পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), এস এম রেজা বাবু (ঢোলক), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (দোতারা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড) এবং শাহাদাৎ হোসেন রনি (মন্দিরা)।      
 
রোববারের আয়োজন

১৬ ফেব্রুয়ারি, রোববার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে তথ্য-প্রযুক্তি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নজরুল ইসলাম খান।
 
আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মোস্তফা জাব্বার, তারিক সুজাত, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহবুব জামানের। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।   
 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে বাংলা একাডেমি। রোববার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের চতুর্থ তলার সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪-র সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।  


** বই বিক্রিতে রেকর্ড বাংলা একাডেমি’র

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।