ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

দল নিবন্ধন নিয়ে ‘তামাশা’ করছে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৮
দল নিবন্ধন নিয়ে ‘তামাশা’ করছে ইসি ছবি: নির্বাচন কমিশন ভবন

ঢাকা: সাত মাস হয়ে গেলেও নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে মাঠের রাজনীতিতে যেসব দল সরব রয়েছে তারাই বাদ পড়েছে। আর অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রেখেছে সংস্থাটি।
 

এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ রাজনীতিতে সক্রিয় দলগুলো। ইতিমধ্যে তারা নির্বাচন কমিশনে এসে ধরনা দিচ্ছে।

সোমবারও (১১ জুন) কয়েকটি দলের নেতাদের ইসিতে ঘুরতে দেখা গেছে। যারা ইসি সচিবের সাক্ষাৎ না পেয়েই ফিরে গেছেন। তাদের যুক্তি নিবন্ধন না দিলেও তো জানিয়ে দেবে। কিন্তু প্রায় আট মাস হতে চললো এখনো কোনো সাড়াশব্দ নেই ইসির।

রাজনীতিতে সক্রিয় হিসেবে যে দলগুলোকে দেখা যায় এগুলো হলো- নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।

এ চারটি দলের আবেদন যাচাই করে ইসি অযোগ্যের তালিকায় রেখে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ কংগ্রেস ও গণ-আজাদী লীগকে যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সম্পর্কে তদন্ত করার প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে।
 
দলের গঠনতন্ত্র ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি থাযথভাবে জমা না দেওয়ায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, শরীফ নূরুল আম্বিয়ার জাসদ একাংশের বাংলাদেশ জাসদ এবং ববি হাজ্জাজের এনডিএমকে নিবন্ধন অযোগ্য করেছে ইসি।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে তামাশা করছে। আর নির্বাচন কমিশন তামাশা করছে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে। ২০১৩ সালেও রাজনৈতিক অস্তিত্বহীন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছিলো কমিশন। নীল নকশার নির্বাচন করার লক্ষ্যে এবারো তাই হতে যাচ্ছে। আমরা নিশ্চিত যথাযথ গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট সংগ্রহ করলে দেখা যাবে দেশের সবচেয়ে সাংগঠনিকভাবে তৎপর এবং উদীয়মান দল হলো-এনডিএম। নির্বাচন কমিশন আমাদের নিবন্ধন না দিলে আদালতে যাবো।

২০১৭ সালের অক্টোবরে দলগুলোর কাছে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানায় ইসি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৭৬টি দল আবেদন করে। সাত মাস ধরে যাচাই-বাছাই করে করে দুটি দলকে যোগ্য হিসেবে অভিহিত করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। এখন এদের সম্পর্কে তদন্ত করা হবে। এরপর ইতিবাচক প্রতিবেদন এলে তারা নিবন্ধন পাবে। অথচ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ শেষ করার কথা ছিল।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে বলেন, আমাদের দলকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নির্বাচন কমিশন যা চেয়েছে সেসব কাগজ আমরা দিয়েছি। কিন্তু তার কত অগ্রগতি হয়েছে সেটা জানতে গেলে নির্বাচন কমিশন বিরক্ত হয়। বলে, পরে জানাবে।
 
বাংলাদেশ জাসদ’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন বলেন, আশা করি নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। আমাদের দু’জন সংসদ সদস্য রয়েছে। তাই নিবন্ধন না পেলে ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েও সাক্ষাৎ পাননি।
 
এদিকে গণ-আজাদী লীগ ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। আর বাংলাদেশ কংগ্রেসও নিবন্ধন পাবে বলেই আশা করছে।

নিবন্ধনের বিষয়ে ইসির অতিরিক্তি মোখলেসুর রহমান বলেন, নিবন্ধনের বিষয়টি শেষের পর্যায়ে রয়েছে। দু’টি দল যোগ্য বলে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এখন তাদের সম্পর্কে মাঠ লেবেলে তদন্ত করে দেখা হতে পারে, অফিস, কমিটি আছে কি না।

২০০৮ সালের পূর্বে নিবন্ধন ছাড়াই সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেত। কিন্তু এখন নির্বাচন অংশ নিতে চাইলে রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসি থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বর্তমানে ৪০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে।

২০১৩ সালে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এরপর আর কোনো দল নিবন্ধন পায়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য দলগুলোর হাতে আর মাত্র ৩ মাস সময়।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৮
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।