ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শুন্য হাতে ফিরছেন ‘জিরাতিরা’

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
শুন্য হাতে ফিরছেন ‘জিরাতিরা’ হাওরের পাড়ে জিরাতিদের ঘর/ছবি: আনিক খান

ইটনা হাওর (কিশোরগঞ্জ) থেকে: দূর দূরান্ত থেকে তারা আসেন। হাওরের বুকে জমি কিনে বসতি গড়েন। হাওরে তারা পরিচিত ‘জিরাতি’ নামে। হাওরের সঙ্গেই তাদের গভীর হৃদ্যতা-সখ্য। আর এ কারণেই কীনা তারা ঘরও বাঁধেন হাওরপাড়েই।

শন দিয়ে ছাওয়া অস্থায়ী ঘরেই থাকেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। হাওরের এক চিলতে চরের বুকেই কাটাতে হয় বছরের ছয়টি মাস।

খরতাপে-রোদে পোড়েন আর বৃষ্টিতে ভেজেন।

তবুও গোটা বছরের একমাত্র সম্বল বোরো ফসল ফলিয়ে গন্তব্যে ফিরেন। কিন্তু আগাম পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টি স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে এবার জিরাতিদেরও সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে।

পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তাদেরও পুরো ফসলটাই মার গেছে। হতাশ হয়ে অনেক জিরাতি হাওর ছাড়তে শুরু করে দিয়েছেন।

যারা এখনো রয়ে গেছেন তাদেরও হাওর থেকে ফিরবেন শুন্যহাতে। বাড়ি ফিরে অভাবের সংসারে সামনের দিনগুলো কীভাবে পাড়ি দেবেন এ দুশ্চিন্তায় ঘুমও যেন হারাম হয়ে গেছে।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার শিমুলবাগ ও এলেংজুড়ি হাওর ঘুরে জিরাতিদের বেদনামাখা সারি সারি চিত্রপট চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

বিস্তীর্ণ হাওরের চরের মাঝে জিরাতিদের ঘরসমূহ আদতে কুঁড়েঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন টইটুম্বর পানিকে আরো দুলিয়ে দিচ্ছে কৃষি-শ্রমিকদের এ ঘরগুলো।

বাঁশের বেড়া আর শন দিয়ে ছাওয়া এসব ঘর তৈরি করতে প্রতি বছরই কার্তিক মাসে হাওরে এসে ভিড় করেন এ অঞ্চলের বাইরের লোকেরা।

টাঙ্গাইল, রংপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে তারা আসেন। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে নেমে পড়েন বোরো জমি আবাদে। তাদের কারো দল বড়।
হাওরের পাড়ে জিরাতিদের ঘর/ছবি: আনিকআবার কেউ কেউ ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ধানের চারা রোপণ করেন। নিজেদের জমি-জিরাত চাষবাসের পাশাপাশি অবস্থাসম্পন্ন কৃষকদের কাছ থেকেও অনেকেই জমি বর্গা নেন।

ধানের আবাদ বা কাটার মধ্যেই শুধু তারা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন না। সংসারের পুষ্টির জোগান দিতে কিংবা বাড়তি আয় করতে তারা জেলেদের সঙ্গে নেমে পড়েন মাছ ধরায়।

ট্রলারে করে রাতভর মাছ ধরেন। রাত শেষে হয় বাড়িতে নয়তো বাজারে মাছ তোলেন। নগদা-নগদ টাকা পকেটে ভরে খুশিমনে অস্থায়ী ডেরায় ফেরেন।

ইটনা উপজেলার আনন্দপাড়া জেটীঘাট এলাকার নৌকার মাঝি নুরু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হাওরে আর জিরাতিদের পাওয়ার কিছু নেই। সবই তো শেষ হয়ে গেছে।

নুরু মিয়ার এমন সোজাসাপ্টা উচ্চারণ রেখাপাত করলো নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি থেকে আসা জিরাতি দলের প্রধান কালা মিয়ার মাঝেও। তার মুখে কোন হাসি নেই। মুখাবয়বে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। হাওরপাড়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

জানালেন, কার্তিক মাসে ঘর তৈরি করে হাওরপাড়ে থাকতে শুরু করেন। বৈশাখ অবধি এখানে থেকে যান। কিন্তু এবার আগেভাগেই সব স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। শুন্য হাতে এবার অনেক জিরাতি হাওর ছেড়েছেন। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকদের মতো তাদের স্বপ্নও যে তলিয়ে গেছে হাওরের বিশাল বুকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এমএএএম/জেএম

** চোখ-নদীর জল একাকার হাওরের জলে!
** হাওরে বিদ্যুৎ যায় না, আসে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ